সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং হেনস্তকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল (ডিএসইসি)। সংগঠনটি প্রত্যাশা করছে, রোববার আদালত রোজিনা ইসলামকে জামিনে মুক্তি দেবেন।

শনিবার (২২ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ডিএসইসির আয়োজিত সাংবাদিক রোজিনার মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি ও প্রত্যাশা জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা যদি ঠিকভাবে কাজ না করতে পারে, তবে একটি দেশ সরকার সঠিকভাবে চলতে পারে না। সরকার দুর্নীতিবাজ আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। রোজিনা ইসলাম সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছে। যার ফলে আমলারা তাকে ফাঁদে ফেলেছে বলে আমাদের ধারণা। তিনি যদি চুরি করতেন তাহলে তাকে ৫ ঘণ্টা সচিবালয়ে কেন আটকে রাখা হলো। জামিন শুনানি শেষে আদালত আদেশ না দিয়ে কেন তাকে অপেক্ষা করানো হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি, কোনো একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

তারা দাবি জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। সচিবালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা যারা তাকে হেনস্তা করেছে তার বিচার করতে হবে। রোজিনার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে আমাদের আন্দোলন চলবেই।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি মামুন ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয়, সাবেক সভাপতি মোতাছিম বিল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম সেতু, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির কুদ্দুস আফ্রাদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ প্রমুখ।

রোজিনার মুক্তির দাবিতে নারী সাংবাদিকদের প্রতীকী অনশন

এদিকে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রতীকী অনশন করেছে নারী সাংবাদিকরা। একইসঙ্গে তারা অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে।

শনিবার (২২ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে বিক্ষুব্ধ নারী সাংবাদিকরা এই অনশন পালন করেন। এসময় দৈনিক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা পরিষদ ও অন্যান্য পুরুষ সাংবাদিকদের সংহতি প্রকাশ করতে দেখা যায়।

অনশন কর্মসূচীতে নারী সাংবাদিকরা বলেন, সারাদেশের গণমাধ্যম কর্মীরা যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তখন একজন সাংবাদিককে চোর উপাধি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো। তথ্য সংগ্রহ কোনো অপরাধ নয়। রোজিনা ইসলামের সঙ্গে এমন একটি ঘটনার জন্য সরকারের দুর্নীতিবাজ আমলাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

তারা আরও বলেন, রোজিনার অন্তত ২০টা রিপোর্ট আছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনিয়ম নিয়ে। তার রিপোর্ট ধরে একটা আমলার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, অথচ একটি অচল আইনে রোজিনার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হলো। এসব অবিবেচনা প্রসূত কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই ও সাংবাদিক রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।

প্রতীকী অনশনে সংহতি জানিয়ে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, শুরু থেকে সর্বস্তরের সাংবাদিকরা যেভাবে রোজিনার জন্য রাস্তায় নেমেছেন এবং তার সঙ্গে সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ ও আপ্লুত।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, এখানে রোজিনা একটা উপলক্ষ মাত্র। যে অন্যায় ও হেনস্তা তার সঙ্গে ঘটেছে সেটির ভুক্তভোগী পুরো সাংবাদিক সমাজ। এসব প্রতিবাদ করে শুধু রোজিনার মুক্তি নয় পুরো সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করতে এসেছি। সাংবাদিকদের হয়রানি করা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার যে পায়তারা সেগুলো প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নেমেছি।

কর্মসূচি থেকে দাবি জানিয়ে বলা হয়, শুধু মুক্তিই নয়, রোজিনার এই মামলাও প্রত্যাহার করতে হবে। সাংবাদিকতা কোনো অন্যায় নয়।এছাড়া সচিবালয়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে রোজিনাকে যারা অত্যাচার করেছে তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।রোববার যদি রোজিনার মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

এমএইচএন/ওএফ