বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রাম ও অর্জনে দেশের শিল্পী সমাজের অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নিয়ে আঁকা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : মহাজীবন পট’ চিত্রকর্মের প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : মহাজীবন পট’ নামে দেড়শ ফুট দৈর্ঘ্যের চিত্রকর্মটি অঙ্কন করেন চিত্রশিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে চিত্রকর্মটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, ‘এই অনন্য সৃষ্টিকর্মের শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে যে তথ্যগুলো প্রকাশ হলো সেটা কিন্তু আমাদের অনেক কিছু জানায়।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘শিল্পী বিকাশ স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সবকিছু চিত্রকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা সত্যিই বিস্মিত হয়েছি। কারণ, একজন শিল্পী কীভাবে এমন চিত্রকর্ম আঁকতে পারেন তার মধ্যে যদি বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা না থাকে, আত্মবিশ্বাস না থাকে! এটি একটি অসাধারণ শিল্পকর্ম।’ 

বঙ্গবন্ধু এ দেশের মাটি থেকে উঠে আসা একজন নেতা। তার চিত্রকর্মটিও মাটির রঙ দিয়ে আঁকা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান হাতে লেখা এবং সেটার প্রথম ডিজাইন কিন্তু দেশের শিল্পীরা যারা ছিলেন তারাই করেছিলেন। চিত্রকলার প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগ্রহ ছিল।’

তিনি বলেন, ‘চিত্রকর্মটি এমনভাবে প্রদর্শন করা উচিত যেন সকল মানুষ এটিকে দেখতে পায়। শুধু এয়ারপোর্ট না, টুঙ্গিপাড়ায় এমন একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হবে, এমন একটা জায়গায় করার চেষ্টা করছি... যারা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যান তারাও এই চিত্রকর্মটি দেখতে পারেন। তার জন্য একটা স্থান সৃষ্টি করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই চিত্রকর্মটি অনলাইনেও যেন মানুষ দেখতে পারেন সে ব্যবস্থাটি আমরা করব। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, সেখানে আমরা এটিকে স্থাপন করব। এই চিত্রকর্মটি আমরা সমগ্র বাংলাদেশে যেন প্রদর্শিত হয় সে ব্যবস্থা করব। সেই সঙ্গে আমাদের প্রবাসে যারা আছেন, তাদের দেখার ব্যবস্থা করব। এটা করা খুব কঠিন কাজ নয়। এটা আমরা করতে পারব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘাতকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আমাদের মাঝ থেকে কেড়ে নিয়েছিল। সেজন্য ২১ বছর এই জাতির জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। আর এ ২১ বছর একটা চেষ্টাই করা হয়েছিল যেন জাতির পিতার নাম না থাকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নামটাই মুছে ফেলা... সেটা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস হোক আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস হোক। সবকিছু থেকেই তাকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার একটি চেষ্টা পাকিস্তান যেমন করেছে, পঁচাত্তরের পর যারা স্বাধীনতা বিরোধী তারাও করেছে। কিন্তু আমাদের যারা শিল্পী-সাহিত্যিক আছেন, তারা তাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে, তাদের তুলির আঁচড়ে, কবিতার মাধ্যমে, গানের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে এই নামটি চিরভাস্বর করে রেখেছেন। সেজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কারণ, একটি প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আমাদের শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি থেকে শুরু করে সবাই কাজ করেছেন। আমরা রাজনৈতিকভাবেও চেষ্টা চালিয়েছি। আমাদের দেশের প্রতিটি অর্জনে, সংগ্রামে শিল্পীদের অনেক অবদান রয়েছে।’

বক্তব্যে শিল্পীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ঘোষণা দেন সরকার প্রধান। 

অনুষ্ঠানে শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ বলেন, ‘আমি যে শিল্পকর্মটি তৈরি করেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমাদেরও কিছু দায়িত্ব ছিল। আমি সামান্য একজন চিত্রশিল্পী, আমি কিইবা করতে পারি। আমি আমার জায়গা থেকে একটা স্ক্রল পেইন্টিং করি।’

তিনি বলেন, ‘আমার নিজস্ব স্টুডিও নেই। আমি আমার ঘরের মধ্যে কাজ করি। আমার এই শিল্পকর্ম তৈরিতে আমার চেয়ে আমার স্ত্রী বেশি অবদান রেখেছে। আমার সন্তানরা কাজ করেছে। তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়েছে।’

শিল্পী বিকাশ এই চিত্রকর্মটি দেশের সব জেলায় নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের যে সকল দেশ ভ্রমণ করেছেন, সেসব দেশে চিত্রকর্মটির প্রদর্শনীর আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। 

শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভে (ইউডা) চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এইউএ/ওএফ/জেএস