রেলওয়ের মানোন্নয়ন প্রকল্পের ১ হাজার ৮৮৯ জন গেটকিপার তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন তারা। আজ (মঙ্গলবার) অনশনের তৃতীয় দিন চলছে। দীর্ঘ সময় অনশনের ফলে ইতোমধ্যে ২০ জন গেটকিপার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 

যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাদের মধ্যে কুলাউড়া সেকশনের রায়হান, টঙ্গীর লাকী আক্তার ও ফেনীর হালিমা খাতুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং যশোর সেকশনের চামেলি বেগম, শ্রীমঙ্গলের আকুল মণ্ডল, জামালপুরের কাকলি বেগম ও শ্রীমঙ্গলের কাউছার আহম্মেদ অনিক মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থ হয়ে পড়া অন্যদের অনশন স্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

টানা ৭২ ঘণ্টা ধরে কমলাপুরের খোলা আকাশের নিচে গেটকিপাররা অনশন চালিয়ে এলেও এখনো পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গেটকিপাররা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। 

অনশনের কারণে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হলে তার দায় রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। 

গেটকিপারের চাকরি রাজস্বীকরণ বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের ডাকে অনশন শুরু হয়। অনশনের ডাক দেওয়া সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মো. আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনশনকারীদের অনেকে ভীষণ অসুস্থ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই অনশন কর্মসূচি চলবে।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া গেটকিপাররা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের মানোন্নয়ন প্রকল্পে ১ হাজার ৮৮৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ৫৫৫ জন রেলপোষ্য ও ৩২৫ জন নারী রয়েছেন। 

২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পে কর্মরত গেটকিপারদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করে চাকরি স্থায়ীকরণে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয় এখনও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ে অনেকবার স্মারকলিপি, চিঠি দিয়ে দুর্দশার কথা জানানো হলেও কোনো ফল আসেনি বলে অভিযোগ করেছেন তারা। 

তারা বলেন, নিয়োগের সময় তাদের বেতন নির্ধারণ করা হয় সর্বসাকুল্যে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। গত পাঁচ বছরে এ বেতন বাড়েনি। বর্তমান বাজারে বাসা ভাড়া, পরিবারের ভরণপোষণ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

চাকরির মেয়াদ প্রায় ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তাই অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তর করার জোর দাবি জানান তারা। অন্যথায় আমরণ অনশন অব্যাহত রাখা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। 

পিএসডি/এইচকে