‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’ স্লোগানে চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ এর আয়োজনে শনিবার (৫ মার্চ) থেকে ঢাকার আগারগাঁও বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে শুরু হয়েছে ১৫তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশ-২০২২। 

বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ১ম পর্বে উদ্বোধনী সংগীত, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে উৎসবটি উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ-এর সভাপতি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

২য় পর্বে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এর প্রজেকশন হলে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে উৎসবটির অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী পলক। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা মোরশেদুল ইসলাম, সভাপতি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, উপদেষ্টা ইয়াসমিন হক। উৎসব সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন উৎসব পরিচালক শাহরিয়ার আল মামুন। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এর মহাপরিচালক মো. নিজামূল কবীর। 
   
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শিত হয় ডেনিস গ্যানসেল পরিচালিত জার্মান চলচ্চিত্র ‘জিম বাটন অ্যান্ড দ্যা ওয়াইল্ড ১৩’।
    
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে প্রতিদিন বেলা ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মোট ৪টি প্রদর্শনী হবে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের উৎসব ঢাকার ১টি ভেন্যুতে প্রায় ৩৮টি দেশের ১১৭টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। প্রতিটি প্রদর্শনীতে একাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখানো হবে। উৎসবের সব প্রদর্শনী অভিভাবক, শিশু-কিশোরসহ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সিনেমা দেখার জন্য কোনো ধরনের প্রবেশমূল্য না থাকলেও গত বছরের মতো এ বছরও মাস্ক পরিধানকে চলচ্চিত্র উৎসবের টিকিট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।     

চলচ্চিত্র উৎসবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৩৮টি দেশের বিভিন্ন স্বাদের চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ পাবে, উৎসব উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিনামূল্যে যাতায়াতের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্র দেখানো হবে। 

এবারও উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় বিভাগ হিসেবে আছে বাংলাদেশি শিশুদের নির্মিত প্রতিযোগিতা বিভাগটি। এই বিভাগে এবার ২৫টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছিল, যার মধ্যে নির্বাচিত ৯টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এই ৯টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ৩টি চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। পুরস্কার হিসেবে থাকছে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও আর্থিক প্রণোদনা।

এবারও ‘ইয়াং বাংলাদেশি ট্যালেন্ট’ শীর্ষক বিভাগটি রয়েছে যেখানে ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ নির্মাতারা অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও ‘সামাজিক চলচ্চিত্র’ বিভাগে এবারের বিষয় ছিল ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’, এই বিভাগে বিশেষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী থাকছে। একই সঙ্গে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগ, এ বিভাগে জমা পড়েছিল ৯০টি দেশের ২১০০ চলচ্চিত্র, যার মধ্য থেকে উৎসব কমিটির মাধ্যমে প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশসহ আরও ৩৮টি দেশের মোট ১১৭টি চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রগুলো বিচার করার জন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, শবনম ফেরদৌসীকে সদস্য করে আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আবু শাহেদ ইমন, রাকা নওশিন নাওয়ার ও ফখরুল আরেফিন খানকে সদস্য করে ‘ইয়াং বাংলাদেশি ট্যালেন্ট’ বিভাগের চলচ্চিত্র বিচার করার জন্য একটি জুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

এছাড়া গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বিভিন্ন দেশের শিশুদের বানানো চলচ্চিত্র নিয়ে থাকছে প্রতিযোগিতা বিভাগ, যেখান থেকে একটি চলচ্চিত্রকে পুরস্কার দেওয়া হবে। উৎসবে ক্ষুদে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এবারেও মোট ৪টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ মার্চ বেলা ১১টায় ক্ষুদে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও ডিস্ট্রিবিউশন এর উপর কর্মশালা নেবেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আরিফুর রহমান, সন্ধ্যা ৬টায় ক্ষুদে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে সেলিব্রেটি আড্ডায় অংশ নেবেন বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। 

জেডএস