জালিয়াতির দায়ে গ্রেপ্তার আঞ্জু কাপুর

স্বামী মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের মারা যাওয়ার তথ্য গোপন করে মৃত্যুর পর দিনই ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলনের ঘটনায় দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির ঢাকা মেট্রোর একটি দল।

দুপুরে সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক এতথ্য নিশ্চিত করে বলেন, স্বামীর (মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ) মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করে মৃত্যুর পরদিনই তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার স্বামীর সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। আইনত কারও মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের জানাতে হয়, মালিকানা ও সম্পদের বন্টনও ওয়ারিশদের মধ্যে হয়। এটি তিনি না মেনে স্বামীর মৃত্যুর খবর গোপন করে ওই টাকা উত্তোলন করেন, যা স্পষ্টত জালিয়াতি। এজন্য গুলশান থানায় গত ২৫ ডিসেম্বর মেয়ে মুশফিকা মোস্তফার (৩৫) দায়ের করা জালিয়াতির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী মুশফিকা মোস্তফা অভিযোগ করেন, ‘আমার বাবা গত বছরের ১০ অক্টোবর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যুর আগে আঞ্জু কাপুর এক ভারতীয় নারীকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে নিয়োগ দেন। বাবার মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় গেলে ব্যাংক থেকে জানানো হয়, গতকাল অর্থাৎ ১১ অক্টোবর আঞ্জু কাপুর ব্যাংকে এসে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। বাবার মৃত্যুর বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানেন না।’

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে গত ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট দুই বোন এবং তাদের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের সম্পত্তি দাবির সপক্ষে কাগজপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। 

পাশাপাশি মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে আদেশ দেন। একইসঙ্গে গুলশানের (২-এ/৯৫ নম্বর) ওই বাড়িতে থাকা জিনিসপত্র কোনো পক্ষ বাইরে নিতে পারবে না এবং দুই বোনের নিরাপত্তা অব্যাহত রাখতে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়।

মামলার তদন্ত তত্ত্বাবধায়ক সিআইডির ঢাকা মেট্রোর পুলিশ সুপার খাদিমুল হক হাওলাদার জানান, মৃত্যুর তথ্য গোপন করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন জালিয়াতি। এক তিনি স্বামীর মৃত্যুর খবর গোপন করেছেন। দ্বিতীয়ত, ওয়ারিশদের অবগত না করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। 

ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও মূল অ্যাকাউন্টধারীকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফোন করে নিশ্চিত হন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক গুলশান শাখার কোনো দায় বা অবহেলা কিংবা যোগসাজশ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এসপি খালিদুল হক বলেন, গ্রেপ্তার নারী ভারতীয় নাগরিক। তার পাসপোর্ট ও ব্যাংকিং লেনদেনও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর বাবার মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে গুলশান ২-এ/৯৫ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়ির সামনে অবস্থান নেন দুই বোন।

তাদের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। পরে এই দুই বোনের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ আসার পরে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ বাড়িতে প্রবেশ এবং সেখানে তাদের অবস্থান নিশ্চিতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ওই দিন রাতেই আদালতকে জানাতে বলা হয়। আদেশ বাস্তবায়ন করার পরে তিনি তা আদালতে জানান।

জেইউ/এসএম