আটকে পড়া নাবিকদের কাছে পেয়ে খুশি স্বজনরা
চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রুশ বিমান হামলার শিকার ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ১২ নাবিক। বুধবার (৯ মার্চ) রাত ৮টার দিকে একটি ফ্লাইটে শাহ আমানত বিমান বন্দরে নিরাপদে অবতরণ করেন নাবিকরা।
এর আগে প্রিয়জনের দেখা পেতে বিমান বন্দরে জড়ো হতে থাকেন নাবিকদের স্বজনরা। স্বজনদের কাছে পেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন কয়েকজন। তবে স্বজনদের কাছে পেয়ে খুশি সবাই।
বিজ্ঞাপন
জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক তুহিন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের সাহসী পদক্ষেপে আমরা দ্রুত দেশে ফিরতে পেরেছি৷ দেশবাসী আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এসময় নাবিকদের জন্য দেশবাসীর জন্য দোয়া চান তিনি।
ছেলে আসার সংবাদে আগে থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ ছিলেন জাহাজের নাবিক মাসুম বিল্লাহর বাবা মো. ওবায়দুল হক। জাহাজে হামলার পর যিনি ছেলের সংবাদ নিতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে ছুটে গিয়েছিলেন। ছেলেকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। ওবায়দুল হক বলেন, জাহাজে হামলার পর ছেলে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করেছিল। তার কান্না শুনে আমরা ভেঙ্গে পড়েছিলাম। সবাই হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। ঘটনার পর খাওয়া ধাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজকে ছেলেকে কাছে পেয়েছি। কি যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। যারা তাদেরকে দেশে আনতে সহযোগিতা করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ।
বিজ্ঞাপন
জাহাজের ইঞ্জিনিয়ার জামাল হোসেনের স্ত্রী শামীমা আক্তার বলেন, ঘটনার পর আতংকের মধ্যে ছিলাম। দেশে আসার আগ পর্যন্ত টেনশনে ছিলাম। শিপিং করপোরেশন থেকে আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে দ্রুত দেশে নিয়ে আসছে, তাই সরকারকে আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। নিজের মানুষ নিজের কাছে ফিরে পেয়ে খুবই আনন্দিত।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরা ১২ নাবিকের বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। তবে সবার নাম জানা যায় নি।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকেপড়া জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন বুধবার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টা ১ মিনিটে। এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার রাত সোয়া ২টায় রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট থেকে ২৮ নাবিক দেশের উদ্দেশে রওনা করেন। তাদের ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল-দুবাই হয়ে আজ ঢাকা অবতরণ করে।
এদিকে গতকাল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) উপ-মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান জানান, জাহাজে হামলার ঘটনায় মারা যাওয়া থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ হাদিসুর রহমানের মরদেহ ইউক্রেনের একটি বাংকারের ফ্রিজারে রাখা হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে মরদেহটি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর চ্যানেলে আটকে পড়ে বাংলার সমৃদ্ধি। ২ মার্চ রাত ৯টা ২৫ মিনিটে জাহাজটি হামলার শিকার হয়। হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান নিহত হন। জাহাজটিতে মোট ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন।
জীবিত ২৮ নাবিককে গত ৩ মার্চ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ইউক্রেনের একটি বাংকারে নেওয়া হয়। পরে তাদের নিরাপদে রোমানিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। সেখান থেকে কার্গো নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল এটির। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছার পরপরই পণ্যবোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেয় শিপিং করপোরেশন। শেষ মুহূর্তে পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অলভিয়া বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কেএম/আইএসএইচ