ওষুধ চুরি করে বাইরে বিক্রি করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) ফার্মেসিতে  অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে চমেক হাসপাতালের আউটডোর ফার্মেসিতে কিছু অসঙ্গতি ও গরমিল  পেয়েছে দুদক।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের ফার্মেসিতে এ অভিযানে আসে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির ৪ সদস্যের টিম। দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাজমুছ ছায়াদাতের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে উপ-পরিচালক আবু সাঈদ, সহকারী পরিচালক এনামুল হক, কনস্টেবল মো. ইমরান হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শেষে দুপুর ৩টার দিকে মো. নাজমুছ ছায়াদাত বলেন, দুদকের হটলাইন ১০৬ এ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে। অভিযোগ করা হয়ে, হাসপাতালের সাধারণ রোগীর জন্য যে ওষুধ কেনা হয়, তা রোগীরা পান না। বাহির থেকে রোগীদের ওষুধ কিনে আনতে হয়। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে আজ অভিযান চালানো হয়।

দুদকের এই উপ-পরিচালক বলেন, ৪৬টি ওয়ার্ড আছে হাসপাতালে। আমরা স্যাম্পল হিসেবে দুই জায়গায় যাই। এরমধ্যে আউটডোর ফার্মেসির রেজিস্ট্রারে কিছু গরমিল পেয়েছি। এই গরমিলগুলো দুদক আরও যাচাই-বাছাই করবে। তারপর দুদকের কেন্দ্রীয় অফিসে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ফার্মেসির গড়মিলের বিষয়ে তিনি বলেন, স্টোর থেকে তারা ফার্মেসিতে কিছু ওষুধ লোন নেয়। এই লোন ওষুধ ব্যবহারের ঠিকমতো ব্যাখ্যা ফার্মেসির দায়িত্বরতরা দিতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে, স্টোর থেকে যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়, তা পুরোটা রোগীদের দেওয়া হয় না।

দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে গিয়ে কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। এ সময় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। এখানে আমরা কোনো অনিয়ম পাইনি। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আজ কিছু রেকর্ডপত্র দেখেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে আরও কিছু রেকর্ডপত্র চেয়েছি। সবগুলো দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এটা পাঠাব।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওষুধ স্টোর শাখার ইনচার্জ ডা. হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, চমেকে দুদকের একটি টিম এসেছিল। আমি নিজে তাদের সহযোগিতা করেছি। তারা অর্থপেডিক্স ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন। গিয়ে দেখেছেন, সরকারি ওষুধ রোগীরা যথাযথভাবে পাচ্ছেন কিনা। তারা এটি নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। আউটডোর ফার্মেসির কিছু প্রক্রিয়ার বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে বলেছেন। দুদক টিম স্টোর ও আউটডোর ফার্মেসির ওষুধ বিতরণের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে।

হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরি হয়ে যায় এমন অভিযোগ রয়েছে, এই বিষয়ে আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ন কবির বলেন, ওষুধ যাতে চুরি না হয়, সে বিষয়ে আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন স্টোর থেকে শুধু ওয়ার্ড ইনচার্জরাই ওষুধ নিতে পারেন। তারা যথাযথভাবে ওষুধ বিতরণ করবেন।

অভিযানে চমেক মেডিকেলের আউটডোর ফার্মেসির বিভিন্ন কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখছেন দুদক কর্মকর্তারা। তারা হাসপাতালের কেন্দ্রীয় ওষাধুগারে বিভিন্ন কাগজপত্র দেখেছেন। ভেতর থেকে কিছু নথিপত্র এনে আউটডোরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। 

জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইন ১০৬ নাম্বারে ফোন করে এক গ্রাহক ফার্মেসির বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে  অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযানে নামেন দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়-১ এর কর্মকর্তারা।

উল্লেখ, গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার সরকারি ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাসপাতালের গোল চত্বর থেকে তাদের আটক করা হয়। গ্রেফতার দুজন হলেন ২৬ নং ওয়ার্ডের সরকারি স্টাফ আশু চক্রবর্তী ও আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. সৈয়দ। চুরির ঘটনায় চমেকের স্টোর অফিসার ডা. মো. হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশও ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। 

কেএম/এমএইচএস