আগামী ৩০ মার্চ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। এ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে প্রথম বক্তা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ নিয়ে করণীয় ও যৌথ কৌশল নির্ধারণ, আঞ্চলিক সন্ত্রাস ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেবেন।

বুধবার (২৩ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি জানান, আগামী ৩০ মার্চ কলম্বোতে পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন। অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধানরাও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রতিনিধি ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা হাইব্রিড মোডে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি। এরপর শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির স্বাগত বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বক্তব্য দেবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিমসটেক অঞ্চলে দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত, কভিড-১৯ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে যৌথ কৌশল নির্ধারণ এবং আঞ্চলিক সন্ত্রাস ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনসহ অন্যান্য সমস্যাকে যৌথ সমস্যাবলী হিসেবে নিয়ে উপযুক্ত কৌশল অবলম্বনপূর্বক আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মোকাবিলা করার আহ্বান জানাবেন।

তিনি বলেন, বিমসটেককে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিমসটেক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে আগের মতো বাংলাদেশের সমর্থন ও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে অবহিত করবেন। এ সম্মেলনে তিনি বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সামষ্টিক উন্নয়নের জন্য বিমসটেক প্রক্রিয়াকে আরও সক্রিয় করার জন্য প্রয়োজনীয় সব আইনি কাঠামো এবং অন্যান্য আইনি দলিল দ্রুত সম্পন্ন ও কার্যকর করার ওপর আহ্বান জানাবেন।

ড. মোমেন জানান, শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগে ২৯ মার্চ ১৮তম বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভা এবং ২৮ মার্চ ২২তম বিমসটেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সভা (পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের) হবে। কলম্বোতে অনুষ্ঠিত সভা দুটিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ব্যক্তিগত উপস্থিতির মাধ্যমে অংশগ্রহণ করবে।

এবারের সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের ভৌগলিক স্বাতন্ত্র্য, বিপুল প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ, ঐতিহাসিক সংযোগ এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিমসটেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নত করে গড়ে তুলতে আসন্ন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সম্মেলনে গৃহীত হবে চার গুরুত্বপূর্ণ দলিল

এবারের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল নেতৃবৃন্দ কর্তৃক গৃহীত ও স্বাক্ষরিত হওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। এগুলো হলো— ১) বিমসটেক চার্টার ২) বিমসটেক কনভেনশন অন মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্ট ইন কিওমিনাল মেটারস ৩) মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অন দ্যা এস্টাবলিস্টমেন্ট অব বিমসটেক টেকনোলজি ট্রান্সফার প্যাসিলিটি (টিটিএফ) ৪) মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) অন মিউচুয়াল কোঅপারেশন বিটুইন ডিপ্লোমেটিক একাডেমিস/ট্রেনিং ইনস্টিটিউশনস অব বিমসটেক মেম্বার স্টেটস।

এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন জানান, বিমসটেক চার্টার সনদে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি স্বাক্ষর করবেন। ২ এবং ৩ নম্বর দলিলে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাক্ষর করবেন। চতুর্থ দলিলে বাংলাদেশের পক্ষে রেক্টর, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি স্বাক্ষর করবেন। এছাড়া আরও দুটি দলিল নেতৃবৃন্দ কর্তৃক গৃহীত হওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। এগুলো হলো— রেশনালাইজেশন অ্যান্ড রিঅর্গানাইজেশন অব সেক্টরস অ্যান্ড সাব-সেক্টরস অব বিমসটেক এবং বিমসটেক মাস্টার প্লান ফর ট্রান্সপোর্ট কানেক্টিভিটি।

তিনি বলেন, সম্মেলন শেষে বিমসটেক রাষ্ট্র/সরকারপ্রধানরা শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ ঘোষণা জারি করবেন বলে প্রস্তাবনা রয়েছে। এ আনুষ্ঠানিকতার পর বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্ব শ্রীলঙ্কা থেকে থাইল্যান্ডের কাছে ন্যস্ত করা হবে।

এনআই/এসএসএইচ