পেশাদার ও সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের প্রধান সেলিম শেখ ওরফে শুভ

চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া পেশাদার ও সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের প্রধান সেলিম শেখ ওরফে শুভকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র‌্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক (অপস) সহকারী পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান চৌধুরী জানান, পেশাদার প্রতারক চক্রের প্রধান সেলিম শেখকে গ্রেপ্তারের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন নথি ও সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়েছেন।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, সেলিম ছাড়া আরও ১০/১২ জন প্রতারণার কাজে জড়িত আছেন। বর্তমানে তারা সবাই পলাতক। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক প্রতারণা মামলা রয়েছে।

টার্গেট করে চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করত চক্রটি

র‌্যাব জানায়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রতারণাকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের একটি সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। এ চক্রের মাঠ পর্যায়ে কর্মীও রয়েছে। এরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেকার ও অসচ্ছল যুবকদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে।

ভিকটিমদের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে প্রলুব্ধ করতো চক্রটি। তারা তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট যুবকদের নিজেদের কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। গ্রাহক বা টার্গেট সংগ্রহে নিয়োজিতদের গ্রাহকপ্রতি নির্দিষ্ট অংকের টাকা দেওয়া হয়।

জব্দ করা গাড়ি, কাগজপত্র, মোবাইল ও ল্যাপটপ

দেওয়া হতো ভুয়া উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিচয়

গ্রেপ্তার সেলিম শেখ দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি নিয়ে এসে নিজেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিত। টার্গেট যুবকদের প্রলুব্ধ করে ঢাকায় এনে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজটিও তিনি করতেন।

ভাইভা নেওয়া

চাকরিপ্রার্থীদের ভুয়া সরকারি বড় কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে চাকরির ভাইভা নেওয়া হত। তাদের ওই ভাইভায় প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যরাই উপস্থিত থাকতেন।

ভুয়া নিয়োগপত্র

ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থসংগ্রহের জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কর্মস্থলে যোগদানের একটি তারিখ দেওয়া হত। পরে ভিকটিম যোগদানের জন্য নির্ধারিত স্থানে গিয়ে বুঝতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া। ভিকটিমরা কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিয়োগপত্র পেয়ে সরল বিশ্বাসে চক্রটির হাতে টাকা তুলে দিত। ভিকটিমপ্রতি এ টাকার পরিমাণ ৫ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অধিকাংশ গ্রামের মধ্যশিক্ষিত বেকার ও নিরীহ যুবকদের চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় শতাধিক চাকরি প্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

গ্রেপ্তারের সময় প্রতারক সেলিম শেখের কাছ থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আটটি ভুয়া নিয়োগপত্র, তিনটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, তিনটি এটিএম কার্ড, দুইটি ল্যাপটপ ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

জেইউ/এসএসএইচ/এমএইচএস