‘টিপ পরা’ নিয়ে রাজধানীতে এক শিক্ষিকাকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের  ইউনিফর্মধারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অফলাইনের পাশাপাশি প্রতিবাদের ঝড় চলছে অনলাইনেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীরা জানাচ্ছেন প্রতিবাদ। নারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পুরুষরাও। নিজেদের টিপ পরা ছবি শেয়ার করছেন তারা।  

টিপ পরার ছবি দিয়ে এক পুরুষ তার ফেসবুকে লিখেছেন, টিপ পরেছি কপালে আমরা, গড়তে প্রতিবাদ; সবাই মিলে কাটাই চলো চিন্তার অবসাদ। 

নারীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ জানিয়ে জীবন আহমেদ নামে ফটো সাংবাদিক ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তি তাকে ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়। আমরা স্বপ্ন দেখি ইউরোপ-আমেরিকার মতো, কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও চিন্তা ভাবনা আফগানিস্তানের মতো।

টিপ পরায় নারীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজের ফেসবুক ওয়ালে নিজের টিপ পরা ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছেন, হোক প্রতিবাদ।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক বিবৃতিতে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা বলে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রে এ ঘটনা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, এ ধরনের ঘটনা বাংলার আবহমান কালের জাতি ধর্ম, বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে মানুষের সাংস্কৃতিক অধিকার ও নারীর সাজ এবং পোশাকের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস।

অন্যদিকে টিপ পরায় নারীকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ সংসদেও হয়। এ নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সদস্য অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বাংলাদেশের কোন সংবিধানে, কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবে না। এখানে হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এমনকি সে বিবাহিত না বিধবা সেটা বিষয় নয়...’

তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষিকা শনিবার অভিযোগ করেন,  তেজগাঁও এলাকায় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা এক ব্যক্তি তাকে উত্ত্যক্ত করেন। ঘটনার বর্ণনা করে তিনি শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগটি  নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ।

অভিযোগে বলা হয়, ওই প্রভাষক সকাল ৮টা ২০ মিনিট থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ফার্মগেট মোড় পার হয়ে তেজগাঁও কলেজের দিকে যাওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে। সেজান পয়েন্টের সামনে বন্ধ করে রাখা মোটরবাইকের ওপর বসে এক ব্যক্তি  বলেন, ‘ওই টিপ পরছোস কেন’। শিক্ষিকা পেছন ফেরে প্রতিবাদ করলে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ওই ব্যক্তি তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন (লেখার যোগ্য নয়)।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ইভটিজিং করা ওই ব্যক্তির নাম বা পদবি খেয়াল করতে পারেননি ওই  শিক্ষিকা। তবে গালিগালাজের একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি বাইক স্টার্ট করে প্রায় নারীর গায়ের ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে দিচ্ছিলেন। ওই নারী পিছিয়ে গেলেও তার পায়ে আঘাত লাগে। বাইকটির নম্বর ১৩৩৯৭০ হতে পারে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই নারী।

এমএসি/আরএইচ