পথচারীদের টার্গেট করে চক্রটির সদস্যরা তাদের মোবাইল চুরি ও ছিনতাই করে ফেলত। মোবাইল হাতে পাওয়ার পর চক্রটি দ্রুত ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর পরিবর্তন করে ফেলত। পরে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজধানীর নানা মার্কেটের ভাসমান দোকানে এসব মোবাইল ফোন বিক্রি হতো।

আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে এই চক্রগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে র‍্যাব-৩ এর কাছে খবর আসে। এছাড়া এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য র‍্যাবকে দেয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। এসব তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর ৭টি দল এক যোগে সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বড় অভিযানে নামে।

রাজধানীর লালবাগ, সিদ্ধিরগঞ্জ, পল্টন, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, ওয়ারিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোরাকারবারী চক্রের ৩১ জনকে আটক করে র‍্যাব-৩ এর এই ৭টি দল।

আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি ট্যাব, ৭১৭টি টাচ মোবাইল, ৭৯৩টি বাটন মোবাইল, ২৮টি নতুন ল্যাপটপ ও নগদ ৫৫ হাজার ৬৪৭ টাকা জব্দ করা হয়।

আটকরা হলেন মো. আল মামুন (২৮), মো. রাকিব (২৭), মো. জাহাঙ্গীর (৬৬), মো. ইকবাল (৫০), মো. মোখলেছুর রহমান (৩৮), মো. বিল্লাল মিয়া (৪০), মো. বিল্লাল (২৭), মো. রাকিব (২৩), মো. মাইনু (২১), মো. জনি (২০), মো. স্বপন (৫০), মো. সালাউদ্দিন আহম্মেদ (৩৫), মো. মোশারফ (৪৫), মেহেদী হাসান রাজু (২৪), মো. জুয়েল (৪০), মো. জুম্মুন (২৮), মো. রকিবুল ইসলাম (৩১), মো. নজরুল (৩০), মো. পারভেজ (৩৮), মো. ইউসুফ বেপারী (৪২), মো. ইউসুফ দেওয়ান (৩৫), মো. রুবেল মোল্লা (৩১), মো. রুবেল দেওয়ান (৩০), মো. জাফর (৪৮), মো. নাছির উদ্দিন ওরফে পিন্টু (৩১), মো. আনছার ঢালী ওরফে ডালিম হোসেন (৫২), মো. হালিম সরদার (৫২), মো. শাহীন শেখ (৩১), মোহাম্মদ আলী (৫৫), মো. সবুজ (২৮) ও মো. আবুল হোসেন (৬১)।

র‍্যাব-৩ জানায়, আটকদের মধ্যে মো. রাকিব গুলিস্তান এলাকার চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা, মো. বিল্লাল হোসেন পল্টন এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা, মো. পারভেজ রমনা এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা, মো. নাছির উদ্দিন ওরফে পিন্টু শাহবাগ এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা ও মো. ইউসুফ বেপারী মতিঝিল এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা গোপন সূত্রে খবর পাই আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মোবাইল সিন্ডিকেট চক্র ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মোবাইল কেনা-বেচার বাণিজ্য নিয়ে তৎপর রয়েছে। এসব মোবাইল ফোন বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভাসমান দোকানে গোপনে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে চক্রগুলোর তৎপরতা বেড়েছে এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হচ্ছিল। পরে র‍্যাব-৩ এর গোয়েন্দা নজরদারিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে র‍্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মূলত তারা ছিনতাই ও চোরাই মোবাইল অল্প দামে কিনে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করত। এছাড়া তারা সবাই মোবাইল ছিনতাই ও চুরির সঙ্গে জড়িত।

তিনি আরও বলেন, র‍্যাব-৩ আওতাধীন এলাকায় (ডিএমপির নয়টি রামপুরা, শাজাহানপুর, মুগদা, মতিঝিল, পল্টন, খিলগাঁও, সবুজবাগ, শাহবাগ ও রমনা) এলাকায় অন্তত ২০টির বেশি মোবাইল ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। চক্রগুলো মোবাইল ছিনতাই করে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিভিন্ন সিন্ডিকেট চক্রের যোগসাজশে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গোপনে বিক্রি করে আসছিল।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট থাকে পথচারীদের মোবাইল। এসব মোবাইল স্বল্পদামে চোরাই মোবাইল কারবারিদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও এসব মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে স্বল্প আয়ের গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হত। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার কারণে এসব মোবাইল পরবর্তীতে উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।

এমএসি/আইএসএইচ