‘হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে (নামাজে) দাঁড়াও, কিন্তু সমস্ত রাত্রি নয়, অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কম, অথবা তদপেক্ষা বেশি, এবং কুরআন তেলাওয়াত করো ধীরে ধীরে, সুরেলা কণ্ঠে’। পবিত্র কুরআনের সুরা মুজাম্মিলের প্রথম তিন আয়াতের বাস্তব রূপ যেন ফুটে উঠেছে শবে কদরের রাতের নামাজের চিত্রে। কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও যেন মহান মনিবের বিশেষ উপহারের এই রাতকে ছাড়তে নারাজ।

ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর মধ্যরাতেও রাজধানীসহ সারাদেশের প্রায় প্রতিটি মসজিদেই নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত আর তসবিহ পাঠে মশগুল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট। মসজিদের অজুখানায় অজু করে আবারও নামাজ পড়বে ১২ বছরের এক কিশোর। বাসায় যাবে কখন- জানতে চাইলে মুচকি হেসে জবাব দেয়, আরও নামাজ পড়ে তারপর...। শুধু ছোট্ট কিশোর নয়, বিশেষ এই রাতে নানা বয়সী মানুষ ভিড় জমিয়েছেন মসজিদে। তরুণদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো।

লাইলাতুল কদরের এই বিশেষ রাতে রাজধানীর মধ্যে বাড্ডা এলাকার কয়েকটি মসজিদে সরেজমিনে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে।

মুসল্লিরা বলছেন, আজকের রাতটি আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য উপহার স্বরূপ দিয়েছেন। যেন আমরা আমাদের পাপগুলো থেকে ক্ষমা পেতে পারি।

মো. সায়েম নামের এক তরুণ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রাতটি বিশেষ ইবাদতের রাত। প্রতি রাতই তো আমরা ঘুম আর অন্যান্য কাজে কাটিয়ে দেই। আজকের রাতটা না হয় কষ্ট করে আল্লাহকে ডাকলাম।

তিনি বলেন, এই রাতের ইবাদতটা মূলত আল্লাহকে রাজি-খুশি করানোর জন্য। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি ইবাদতের চেয়ে উৎসবের রাতে পরিণত হয়ে গেছে। আন্তরিক ইবাদতের চেয়ে যেন লোক দেখানো হয়ে গেছে।

ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, শবে কদর বা লাইলাতুল কদরকে বলা হয় হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। অর্থাৎ এ রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

রাজধানীর শাহবাগ চাঁদ মসজিদের খাদেম বেলাল বলেন, আজ আল্লাহকে ডাকার রাত। এ রাতে যত আল্লাহকে ডাকা যাবে, বান্দার তত ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ থাকবে।

মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে ইমাম সাহেবরা বয়ান করছেন। নফল নামাজের পাশাপাশি জিকির-আজকার আর কোরআন তেলাওয়াতে রাত কাটাচ্ছেন মুসল্লিরা।

প্রসঙ্গত, রমজানের শেষ ১০ দিনের যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা যায়। অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজান দিবাগত রাতগুলোর মধ্যে। তবে অনেক আলেমদের গবেষণা ও ব্যাখ্যা মতে, ২৬ রমজানের দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ তারিখে পবিত্র শবে কদরের অন্যতম সম্ভাব্য রাত। 

এই রাতে মর্যাদা সম্পর্কে ইসলামি বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ ১০ দিন আজীবন ইতেকাফ করেছেন। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে (রমজানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাযিল করে জানানো হলো যে, তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে। তারপর মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) তার সঙ্গে ইতেকাফে শরিক হয়।’ (মুসলিম শরীফ)।

মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে অন্যসব মাসের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলত ও বরকতময় হয়েছে। আর রমজানের রাতগুলোর মধ্যে কোরআন নাযিলের রাত লাইলাতুল কদর সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত একটি রাত। 

এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি একে নাযিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কী জান কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা : আল কদর, আয়াত : ১-৩)। 

টিআই/ওএফ