কদিন আগে রাজধানীর নিউ মার্কেটে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষের সূত্রপাত দুটি দোকানের কর্মচারীদের বাগবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে। সেখানে একটি পক্ষ দুষ্কৃতকারীদের নিয়ে আসে আরেক পক্ষকে নিজেদের শক্তি দেখানোর জন্য। সেখান থেকেই ঘটনা এতদূর গড়ায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। সংঘর্ষের ঘটনায় শরীয়তপুর ও কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা তিনজনের মধ্যে দুজনের সম্পৃক্ততা তুলে ধরে র‍্যাবের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।  র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংঘর্ষের সূত্রপাতের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান। 

বাগবিতণ্ডায় যে দুটি দোকানের কর্মচারীরা জড়িয়ে পড়েন, সে দোকান দুটি হলো ক্যাপিটাল ও ওয়েলকাম ফাস্টফুড।  ওয়েলকামের কর্মচারী মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব (২৩) ও মেহেদী হাসান বাপ্পিকে (২১) বুধবার রাতে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-২। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার করা স্বীকার করেছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৮ এপ্রিল রাত থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে চলমান সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এছাড়া, অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ মোট পাচঁটি মামলা দায়ের করা হয়।

ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত ১৮ এপ্রিল বিকেলে ক্যাপিটাল ও ওয়েলকাম নামে দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতার বিক্রয়ের টেবিল বসানো নিয়ে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে দোকানের কর্মচারী সজীব ও বাপ্পি ফোন করে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতকারীদের আসতে বলে।

রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে ১০/১৫ জন দুষ্কৃতকারী এসে ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকান কর্মচারীদের মারধর করে। এ সময় অন্যান্য দোকানের কর্মচারীরা আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা চালান। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন।

তিনি বলেন, পরে মারামারিকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে গুজব ছড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য ও কন্টেন্ট ছড়িয়ে ইন্ধন দেওয়ায় ওই ঘটনা চরম সহিংসতায় রূপ নেয়। সংঘর্ষে কুরিয়ারকর্মী নাহিদ ও দোকান কর্মচারী মোরসালিন নিহত হয়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব-২ ও র‍্যাব-৩ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সংঘর্ষের সূত্রপাতকারী সজীব ও বাপ্পিকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদের বিষয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, বাপ্পি ওয়েলকাম ফাস্টফুডে দুই বছর ধরে কাজ করতেন। বাপ্পি ও সজীব বিভিন্ন সময় নিজেদের হিরোইজম প্রকাশের জন্য গ্রুপিং করতেন। আধিপত্য বিস্তারের জন্য তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা প্রায়ই মার্কেটে আসত। দোকানেই চলত তাদের আড্ডাবাজি। সেই সূত্রে তাদের সঙ্গে বাপ্পি ও সজীবের সঙ্গে সখ্যতা ছিলো।

তিনি বলেন, টেবিল বসানো নিয়ে বিতণ্ডার ঘটনা বাপ্পি ও সজীবের ইগোতে লাগে। এরপর পরিচিত দুষ্কৃতকারীদের খবর দেন তারা। দুষ্কৃতকারীদের সহযোগিতায় তারা মারামারিতে লিপ্ত হন। ঘটনার পর বাপ্পি ও সজীব কক্সবাজারে আত্মগোপনে যান। নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য তার লম্বা চুল কেটে ছোট করে এবং কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে চাকরির চেষ্টা চালায়।

এমএসি/আরএইচ