টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৪৫৫ জনের
করোনার টিকা নিচ্ছেন এক ব্যক্তি
সারাদেশে সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) করোনার টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৯ জন। আজ ছিল করোনার গণটিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের অষ্টম দিন। এ পর্যন্ত দেশব্যাপী মোট টিকা নিয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। নতুন ২৯ জনসহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৪৫৫ জনের।
বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি টিকা নিয়েছেন ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম টিকা নিয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগের মানুষ। এই সময়ে ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন, যার মধ্যে সর্বোচ্চ রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন তিন হাজার ৫১০ জন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে করোনার টিকা নেওয়া ৬২ হাজার ৭৩৩ জনের মধ্যে পুরুষ ৪২ হাজার ১১৪ এবং নারী ২০ হাজার ৬১৯ জন রয়েছেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে ৯ জনের। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এ বিভাগে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট তিন লাখ দুই হাজার ৭০৫ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৯৮ জনের।
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ৯ হাজার ৪৫৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ পাঁচ হাজার ৮৫৬ এবং নারী তিন হাজার ৫৯৯ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে দুই জনের। শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই বিভাগে ৫০ হাজার ৭৩০ জন টিকা নিয়েছেন, এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ২৬ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৫২ হাজার ৭৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ টিকা নিয়েছেন ৩৪ হাজার ২৬২, নারী ১৮ হাজার ৪৮২ জন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে তিন জনের। এ বিভাগে সবমিলিয়ে টিকা নিয়েছেন মোট দুই লাখ ৭০ হাজার ৯৫৯ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ১১৮ জনের।
রাজশাহী বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৬০ জন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ২৪৭ জন পুরুষ এবং আট হাজার ৮১৩ জন নারী। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে এক জনের। সবমিলিয়ে, এই বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন এক লাখ ২৮ হাজার ৭৬৩ জন, এর মধ্যে মোট ৪৫ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে।
রংপুর বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ২১ হাজার ৬১৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৫৭৩ এবং নারী আট হাজার ৪৫ জন। মাত্র এক জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। এই বিভাগে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে সর্বমোট এক লাখ ছয় হাজার ৬৩৪ জন টিকা নিয়েছেন, এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৫৯ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৮৬৬ জন পুরুষ ও ৯ হাজার ৮৪৪ জন নারীসহ মোট ২৭ হাজার ৭১০ জন টিকা নিয়েছেন খুলনা বিভাগে। টিকা নেওয়ার পরে ৪ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এই জেলায় মোট এক লাখ ২৮ হাজার ১৫৯ জন টিকা নিয়েছেন, এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৬৭ জনের।
বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ১৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ আট হাজার ১৮৬ এবং নারী তিন হাজার ৯৪৫ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মাত্র ছয় জনের। এছাড়া গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এই বিভাগে সর্বমোট টিকা নিয়েছেন ৫১ হাজার ৫২৩ জন, এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ২১ জনের।
সিলেট বিভাগের গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১৬ হাজার ২২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৫১ এবং নারী ছয় হাজার ১৭৬ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে তিন জনের। এই বিভাগে এ পর্যন্ত সর্বমোট টিকা নিয়েছেন ৯৩ হাজার ২৩৮ জন, যাদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ২১ জনের।
চার নয়, আট সপ্তাহ পরেই টিকার দ্বিতীয় ডোজ
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম পরিকল্পনায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ কার্যক্রমের শুরু থেকে আট সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা বলা হলেও পরে আবার সেটাকে চার সপ্তাহে নামিয়ে আনা হয়। পরে এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা-সমালোচনার মুখে সেটাকে আবারও আট সপ্তাহ করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় কমিটিসহ অনেকের সঙ্গেই এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠনগুলো থেকেও দ্বিতীয় ডোজের বিষয়ে আট থেকে ১২ সপ্তাহের পরামর্শ আছে। সেক্ষেত্রে আমরা আট সপ্তাহকেই বেছে নিচ্ছি। কারণ এটা আমাদের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম পরিকল্পনায় কার্যকর করতে সুবিধা হবে।
অনেকের দ্বিতীয় ডোজ নিতে চার সপ্তাহ পর সময় দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, যাদেরকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে, তাদেরটা আবারও পরিবর্তন করে দেব। আমাদের কাছে টিকা গ্রহীতাদের যে তথ্য আছে, সে আলোকে আবারও সময় ঠিক করে মেসেজের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজের বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। যেহেতু আট সপ্তাহের একটা বড় সময় আছে, এর মধ্যে আমরা ঠিক করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সুরক্ষা ওয়েবসাইট থেকে যে এসএমএস যায়, দ্বিতীয় ডোজের সময়েও কিন্তু এ রিমাইন্ডারটা যাবে। এতে করে সবাই জানতে পারবেন যে, দ্বিতীয় ডোজ কবে পাবে। এছাড়াও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত আমাদের কিছু কার্যক্রম রয়েছে, এর মাধ্যমেই আমরা সবাইকে নিশ্চিত করব যে চার সপ্তাহের জায়গায় আট সপ্তাহ পরে টিকা নেবেন।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, শুরুতে আমাদের আট সপ্তাহেরই পরিকল্পনা ছিল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে টিকা কার্যক্রম পরিকল্পনা অনুযায়ী সেটাকে চার সপ্তাহ করা হয়েছিল।
করোনায় মৃত্যু-শনাক্ত দুটিই বেড়েছে
করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মোট আট হাজার ২৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক দিনে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৪৪৬ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ৩৮ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন করে ভাইরাসটি থেকে মুক্ত হয়েছেন ৬৪১ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৮৭ হাজার ৮৭০ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২১০টি পরীক্ষাগারে ১৩ হাজার ৯৭৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ১৩৮টি। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ২৫৪টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৯ লাখ ৯৬ হাজার ১৫৯টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় করা হয়েছে আট লাখ ৬৬ হাজার ৯৫টি।
টিআই/এফআর