মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় জরিমানা করার ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুলের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। একইসঙ্গে রেলের পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

রোববার (৮ মে) দুপুরে রেল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ তথ্য জানান রেলমন্ত্রী।

রেলমন্ত্রী বলেন, একজন টিটিইর দায়িত্বই হচ্ছে,এটা দেখা কোনো যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছে কি না। যাত্রীদের সহযোগিতা করা। ডিসিপ্লিন আনার ক্ষেত্রে একজন টিটিইর এটাই দায়িত্ব। আমি এই কথাটাই বলেছি। টিটিই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ডিসিওকে শোকজ করা হবে। 

বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া তিনজনের সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, মাত্র ৯ মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে। নতুন যে স্ত্রীকে আমি গ্রহণ করেছি, সে ঢাকাতেই থাকে। তার মামাবাড়ি ও নানাবাড়ি হলো পাবনা। আমি শুনেছি তারা আমার আত্মীয়। এটা এখন ঠিক, যেটা আমিও এখন শুনেছি। এর আগে আমি জানতাম না এরা কারা এবং আমার জানার কথাও নয়।

রেলমন্ত্রী বলেন, আমার স্ত্রী যদি কোনো ধরনের ভুল করে থাকে… এতে আমার ইনভলবমেন্ট ছিল না। যেটা বলা হচ্ছে বা টার্গেট করা হচ্ছে- মন্ত্রী, এই কারণে... এটা ঠিক না। মেসেজটা যেভাবে গেছে এটা সঠিক হয়নি।

তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় টিটিই বরখাস্ত হওয়ার ঘটনায় মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আকতার মনির নির্দেশনা ছিল বলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, আমিও বিষয়টি শুনেছি। 

সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার পরও টিটিই বরখাস্তের ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নেতিবাচক ধারণা তো অবশ্যই হবে। এটা ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ সেভাবে দেখবে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শফিকুল ইসলামকে পদোন্নতি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হতে পারে। তাকে পুরষ্কৃত করার কথাও ভাববে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

রেলমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির মাধ্যমে পুরো ঘটনা বের হয়ে আসবে। টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার নির্দেশ এবং পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলা হয়েছে।

টিআইবির বিবৃতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, টিআইবি দ্রুত সময়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এখানে মন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা দেখার আগেই তারা এটা করেছে।

গত ৪ মে দিবাগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করায় ৩ যাত্রীকে জরিমানার ঘটনা ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার (৫ মে) বিকেলে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত হওয়া টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যুক্ত।

ঘটনার পর সমালোচনার মুখে পুরো বিষয়টি তদন্তে শনিবার রেলের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে পাকশীতে আজ ওই তিন যাত্রী ও টিটিইর সঙ্গে বসার কথা রয়েছে তদন্ত কমিটির সদস্যদের।

এদিকে এ ঘটনায় রেলমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন।

টিআইবির পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রীর ‘স্ত্রীর তিন আত্মীয়কে’ জরিমানার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শককে (টিটিই) সাময়িক বরখাস্ত করাকে ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি নির্লজ্জ ও নিকৃষ্টতম উদাহরণ। এখানে মূলত দুইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে, প্রথমত রেলমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে রেলের প্রচলিত আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়! 

দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করায় তাকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা- দেশবাসীর কাছে এ বার্তাটিই পৌঁছেছে যে ক্ষমতার দাপট ও অনিয়মই হচ্ছে বাস্তবতা। 

যারা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের জন্য এটি একটি খুবই নেতিবাচক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও মনে করেন তিনি।

এসএম/এনআই/জেএস