নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে অংশীজনদের সংলাপের উঠে আসা মতামত ও পরামর্শগুলো গুরুত্বসহ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রোববার (২২ মে) ইসির যুগ্মসচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন স্টেক হোল্ডারদের মতামত ও পরামর্শসমূহ গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে দেখেছে। এ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রাখা হবে। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কমিশন যথাযথ করণীয় নির্ধারণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিশিষ্টজনদের মতামত ও প্রস্তাবনাসমূহের বিষয়ে কমিশনের মতামত হচ্ছে—অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন-আকাঙ্ক্ষা ও গুরুত্ব নির্বাচন কমিশন সর্বদা অনুধাবন করে থাকে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে কমিশন সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবে। সকল রাজনৈতিক দল বিশেষ করে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলকে অচিরেই সংলাপে আহ্বান করা হবে; ভোটকেন্দ্রে ও ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার, বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সহায়তা প্রয়োজন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহ ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণকেও এ লক্ষ্যে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অতন্দ্রিত ভূমিকা পালন করতে হবে; নির্বাচনে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহ ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণকেও সজাগ দৃষ্টি রেখে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে হবে।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা, মতৈক্য ও সমঝোতা এহেন সমস্যা নিরসনে প্রভূত ভূমিকা রাখতে পারে; নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ প্রতিরোধ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন সম্ভব সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহ ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও এ বিষয়ে সজাগ থেকে নজরদারিসহ সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে; প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতা হলে নির্বাচন একাধিক দিনে কয়েকটি ভাগে সম্পন্ন করা যেতে পারে মর্মে প্রস্তাবনা বিষয়ে কমিশন সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টির সম্ভাব্যতা, উপযোগিতা, সুবিধা, অসুবিধা ইত্যাদি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদিত সাংবাদিকদের এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ প্রদান নিশ্চিত করতে কমিশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে; স্বচ্ছতার জন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরভাগের দৃশ্য বাহির থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করার বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে; এবং ইভিএম এর শুদ্ধতা ও অপপ্রয়োগ রোধ নিশ্চিত করতে কমিশন ইতোমধ্যে কয়েকটি সভা করেছে।

পরীক্ষা ও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিমিত্ত আগামীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে আরও পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হবে। অতঃপর কমিশন আগামী জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহার বা ব্যবহারের পরিধি ও বিস্তৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। নির্বাচনের মাধ্যমেই সংসদ ও সরকার গঠিত হয়ে থাকে। সকলের অংশগ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সফল ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কমিশন তার প্রয়াস নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রাখবে বলেও ইসির লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ১৩ ও ২২ মার্চ এবং ৬ ও ১৮ এপ্রিল যথাক্রমে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিকদের সংলাপে বসে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সেখানে জানানো হয়, সংলাপের উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচন বিষয়ে তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা অবহিত হওয়া। আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের মতামত সবিস্তারে উপস্থাপন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থাপিত মতামত ও প্রস্তাবনা শোনেন। তাদের মতামত, পরামর্শ ও প্রস্তাবনাসমূহ পর্যালোচনা করে কমিশনের মতামত আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরবর্তীতে অবহিত করা হবে বলে সংলাপে অবগত করা হয়েছিল।

সংলাপে যেসব মতামত, পরামর্শ ও প্রস্তাবনা এসেছে

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে অর্থাৎ নির্বাচনে সকল এবং বিশেষত প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন অবাধ হতে হবে। ভোটারদের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগে সম্ভাব্য সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে; নির্বাচনে সম্ভাব্য সকল কারচুপির সুযোগ প্রতিরোধ করে শুদ্ধ ও নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে; ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে; রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তাগণকে বাদ দিয়ে বা তাদের পাশাপাশি যতদূর সম্ভব কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা বা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদেরকে নিয়োগ দেয়া সমীচীন হবে; ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে অনুমোদিত সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে; ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ দিতে হবে।

ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ অবাধ, নির্বিঘ্ন, স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান করতে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরের দৃশ্য বাহির থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ প্রদান করা যেতে পারে; ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে সম্ভাব্য সহিংসতা প্রতিরোধ করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে হবে; প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনীকে ভোটের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে; প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতা হলে নির্বাচন একাধিক দিনে কয়েকটি ভাগে অনুষ্ঠান করা যেতে পারে; ইভিএম এর শুদ্ধতা ও অপপ্রয়োগ প্রতিরোধ নিশ্চিত করা না গেলে ইভিএম এর ব্যবহার পরিহার করে কাগজী ব্যালটের মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠান করতে হবে।

ইভিএমের শুদ্ধতা ও সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে ইভিএম এর ব্যবহার বিস্তৃত করা যেতে পারে; নির্বাচন কমিশনকে গৃহীত শপথের প্রতি অনুগত থেকে সৎ, নিরপেক্ষ ও সাহসী হয়ে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা সততা ও সাহসিকতার সাথে প্রয়োগ করতে হবে; নির্বাচন কমিশনকে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠে দেশবাসীর নিকট আস্থাভাজন হতে হবে; এবং নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও কারচুপিমুক্ত হচ্ছে তা দৃশ্যমান হতে হবে।

এসআর