সর্বশেষ গত মঙ্গলবার পদ্মা সেতু পরিদর্শনে ওবায়দুল কাদের

আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যেই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে সেতুটির কাজে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে যুক্ত চীনা প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের ৩০ শতাংশই নববর্ষ পালনের জন্য নিজদেশে গেছেন সপ্তাহখানেক আগে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা ফিরে আসবেন প্রকল্প এলাকায়। আর তখনই পদ্মা সেতু নির্মাণে বাকি কাজগুলো বহুমাত্রিক গতি পাবে। বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এই স্বপ্ন দৃশ্যমান করতে কখনও গাঢ় কুয়াশা ভেদ করে, কখনও প্রখর খরতাপ মাথায় কিংবা কখনও ঘন বর্ষায় সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭০ বার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় গিয়ে তিনি মুগ্ধ হন এবং বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। ওবায়দুল কাদের মনে করেন, প্রতিশ্রুতি সুদৃঢ় হলে দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব।

জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মুল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুল সেতু ও নদী শাসনসহ নির্ধারিত কাজগুলো বর্ষার আগেই দ্রুত শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। বর্ষায় পদ্মা উত্তাল হয়ে যায়। এ কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও দ্রুত কাজ শেষ করতে সচেষ্ট রয়েছে। চীনা নববর্ষ পালনের জন্য প্রায় ৩০ শতাংশ চীনা কর্মকর্তা নিজদেশ থেকে শিগগিরই ফিরবেন।

গত ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ২ মিনিটে সেতুর ৪১তম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অহংকার ও সক্ষমতার পদ্মা সেতু পূর্ণতার পথে এগিয়ে যায় নতুনমাত্রায়। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় আরও বাড়তে পারে। সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দেবে এ সেতু। একইসঙ্গে উন্নয়নের সূচকে যোগ করবে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশ সেতু বিভাগের তথ্যানুসারে, পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২৬ শতাংশ বাড়বে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। দারিদ্র্যহার কমবে ১ শতাংশ।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে-এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ। মুল সেতুর কাজ হয়েছে ৯২ শতাংশ, নদীশাসনের কাজ হয়েছে ৭৯ শতাংশ, জাজিরা ও মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ বহু আগেই পুরোপুরি শেষ হয়েছে। মুল সেতুর ২৯১৭টি রোড স্ল্যাবের মধ্যে ১৭৯১টি বসানো হয়েছে। এ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬১ শতাংশ। রেলওয়ে স্ল্যাবের ২৯৪৯টির মধ্যে ২৩২২টি স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। প্রকল্পের ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় করা হয়েছে ২৪ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা।

আগামী বছর জুনের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। দেশীয় উপকরণে বেশিরভাগ কাজ হচ্ছে। সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ হাজার ৪০০ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ১ হাজার ৪৫৫ পরিবারকে পুনর্বাসন এলাকায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প এলাকায় এরইমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। পানিপ্রবাহের দিক দিয়ে বিশ্বে আমাজনের পরই পদ্মার স্থান। নকশা প্রণয়নে নদীর পানিপ্রবাহ, তলদেশ আগামী ১০০ বছর পর কেমন থাকবে, ভূমিকম্প প্রতিরোধে কী করা হবে- সেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। চ্যালেঞ্জ অতিক্রমে ৩৮৩ ফুট গভীরে গিয়ে পাইলিং করা হয়েছে। সেতুটি অবকাঠামো দোতলা। নিচে ডুয়েলগেজ রেলপথ এবং উপরে থাকছে ৭২ ফুট প্রশস্ত সড়কপথ। সেতু দিয়ে গ্যাসলাইন ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এর পাশ দিয়ে স্থাপন করা হচ্ছে উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন। ইস্পাতের কাঠামোর সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত থাকছে আলোকব্যবস্থা। এতে উৎসব ও জাতীয় দিবসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখা যাবে বর্ণিল আলোর ঝলকানি। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে প্রকল্পের নদীশাসন কাজ ও মুল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

পিএসডি/আরএইচ