ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও ব্রিটেনের সমাজে বিভিন্ন স্থরে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ১ হাজার ৩৪ জনকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এ বছর ১৯ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও দু’টি সংগঠন এই সম্মাননা অর্জন করেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) এবং কয়েকজন মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। 

রানির জন্মদিন ছাড়াও এবছর ব্রিটিশ জনগণের জন্য আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে এবছরই রানির ক্ষমতায় আরোহণের ৭০তম বার্ষিকী বা প্লাটিনাম জুবিলি পালিত হচ্ছে। তাই এ বছরের ওবিই এবং এমবিই খেতাব বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

এ বছর ওবিই এবং এমবিইসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হওয়া বাংলাদেশিরা হলেন- মুনিম আহামেদ, নাদিয়া সামদানী, রোজিনা আহামেদ, ম্যানচেস্টারের ড. রিজওয়ান আহামেদ, ওয়েস্ট মিডল্যান্ড এলাকার তারিক আলী, বার্মিংহামের ওয়ালসলের মোহাম্মদ আসাদ, ওল্ডহ্যামের নাজমা খালিদ, বার্মিংহামের বদরুন্নেসা পাশা, প্রেস্টনের মোহাম্মদ আলী, ব্রাডফোর্ডের ইবরার আলী, লিডসের আমজাদ হোসাইন, আনোয়ার উদ্দীন, রোকসানা ইয়াকুব, রোকেয়া মিয়া, অলিউর রহমান, আশফাক সিদ্দিক, আব্দুল হাই, আফিয়া চৌধুরী এবং সংগঠন হিসাবে বার্মিংহামের নাটকের দল পূর্বানাট ও ইপসউইচের বিসিএস মাল্টিকালচার সার্ভিস।

মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কৃতি সন্তান বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন ইউকের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল মুনিমকে এ বছর তার কমিউনিটির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ওবিই পদক দেওয়া হয়। মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম বাংলাদেশ ক্যাটারার্স 
অ্যাসোসিয়েশন ইউকে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
 
সম্মাননা পাওয়ার বিষয়ে মোহাম্মদ মুনিম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটির জন্য বিশেষ করে ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের জন্য যে কাজ করে যাচ্ছি তারই স্বীকৃতি হিসাবে এ পদক পেয়েছি বলে আমি গর্বিত। সংগঠনের সদস্য ও কর্মকর্তাদের কাছে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’ 

আফিয়া চৌধুরী 

ব্রিটেনের সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফিয়া চৌধুরী এবছর রানির বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন ২৭ জন এতিম শিশুদের লালন পালনের জন্য। চার সন্তানের জননী আফিয়া চৌধুরী নিজের সন্তানদের ছাড়াও ওই শিশুদের লালন পালনের দায়িত্ব নেন। আর এই অসামান্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ বছর ওই বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। 

নাদিয়া সামদানি

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও ব্রিটেনের শিল্পকলায় পৃষ্ঠপোষকতার স্বীকৃতি হিসেবে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা নাদিয়া সামদানিকে এমবিই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। নিজের চেষ্টা এবং সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের সমসাময়িক চিত্রশিল্পীদের কাজ তুলে ধরছেন নাদিয়া। তাদের কাজগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে।

এমবিই সম্মাননা পাওয়ার খবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাদিয়া সামদানি জানান, এক দশকের বেশি সময় ধরে শৈল্পিক প্রতিভাকে সমর্থন ও লালন করার জন্য এই স্বীকৃতি পাওয়া একটি অসাধারণ সম্মান। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজের সঙ্গে যে বিশাল জনসম্পৃক্ততা তৈরি হয়েছে, এই ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের মধ্যে নতুন আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগকে যেভাবে উৎসাহিত করে চলেছে তাতে আমি আনন্দিত ও অভিভূত।

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার সমসাময়িক শিল্পী ও স্থপতিদের কাজে সহেযোগিতা এবং তাদের কর্মপরিধি বাড়াতে স্বামী রাজীব সামদানির সঙ্গে ২০১১ সালে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন নাদিয়া। তার উদ্যোগেই পরে ঢাকা আর্ট সামিট শুরু হয়।

পূর্বানাট

ব্রিটেনের রানির জন্মদিনে প্রাপ্ত বিশেষ সম্মাননায় রয়েছে বাংলাদেশি নাটকের দল পূর্বানাট। তারা পেয়েছে রাণির সম্মাননা 'দ্যা কুইনস অ্যাওয়ার্ড ফর ভলান্টিয়ার সার্ভিস'। এটিই সংগঠন হিসাবে ব্রিটেনে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। 

পূর্বানাটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নাট্যকার মুরাদ খান বলেন, পূর্বানাট মূলত মাইনরটি বা সংখ্যালঘু গ্রুপকে আর্টসের মাধ্যমে কমিউনিটি উন্নয়ন করায় কাজ করছে। কমিউনিটির বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা, গর্ব করার মতো বিষয়গুলো আর্টসের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। আগে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলেও পূর্বানাটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০১৪ সালে। এই প্লাটফর্ম মূলত অভিবাসী শিল্পীদের সমন্বয়ে গঠিত। এতে মূলধারার শিল্পীরাও যুক্ত আছেন। শুরুতে আমাদের কাজ ছিলো শুধু থিয়েটার। কিন্তু পরে আমরা কমিউনিটির চাহিদা অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছি। 

পূর্বানাট আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামীণ সংস্কৃতি তুলে এনেছে ব্রিটিশ মূলধারায়। ভিন্নভাষাভাষির মানুষের জন্য সংস্কৃতির মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের কাজ করছে পূর্বানাট।

পূর্বানাটে এখন অনেক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম আয়োজন উরস নিয়ে চলছে বিশেষ আয়োজন। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের অবদান নিয়ে তৈরি হচ্ছে সেক্টর ১২ নামের একটি থিয়েটার। একইসঙ্গে ব্রিটিশ হ্যারিটেজের অর্থায়নে মিডল্যান্ড এলাকার প্রবাসী মুক্তিযাদ্ধা সংগঠকদের অডিও রেকর্ড করে আর্কাইভ করা হচ্ছে। 

বদরুন্নেসা পাশা

বদরুন্নেসা পাশা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে প্রবাসে জনমত গঠনে ও তহবিল সংগ্রহে তার ছিল এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের এক সোনালী নাম বদরুন্নেসা পাশা। 

জেডএস