রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন শিকদার মুসাকে ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল তাকে নিয়ে দেশে পৌঁছেছেন। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে তারা দেশে পৌঁছান।

পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ওমান পুলিশ ও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে মুসা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া ছিল। প্রথমে ইন্টারপোল মুসাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরে ওমান পুলিশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। তাকে ফেরত আনতে আমরা সব প্রক্রিয়াও শেষ করি।

মহিউল ইসলাম বলেন, গত রোববার বাংলাদেশ পুলিশের একটি তাকে ফিরিয়ে আনতে ওমানে গিয়েছিল। তারা মুসাকে নিয়ে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। এরপর বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নেমেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছাতে দেরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম হাফিজ আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুসাকে শাহজালাল থেকে সরাসরি মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হবে। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজই তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে।

মুসাকে আনতে ওমানে যান ডিবির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান, অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীন।

গত ২৪ মার্চ রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন।

এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় পরের দিন ২৫ মার্চ দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮।

হত্যাকাণ্ডের পর টিপুর স্ত্রী স্থানীয় নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি যে মামলা করেছেন, তাতে আসামির তালিকায় কারও নাম উল্লেখ করা ছিল না।

পরে ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ব্যক্তিই টিপুকে গুলি করেছিলেন। পরে আরফান উল্লাহ দামাল নামে আরও একজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয় কমলাপুর থেকে।

এরপর ২ এপ্রিল মুসার ভাই সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় র‌্যাব।

ওই সময় র‌্যাব বলেছিল, চাঁদাবাজি ও দরপত্র নিয়ে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব, রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যার বদলা এবং বোঁচা বাবু হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ওমর ফারুকসহ স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। বাজেট ছিল ১৫ লাখ টাকা।

তদন্তকারীদের ভাষ্য, মুসা ‘রাজনীতি ও অপরাধজগতের মধ্যে যোগসূত্র’ হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢাকা ও দুবাইয়ের অপরাধজগতের মধ্যেও সংযোগের সমন্বয় করতেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগেই মুসা দুবাই চলে যান। হত্যা পরিকল্পনা এবং যাবতীয় নির্দেশনা সেখান থেকেই দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দুবাইয়ে বার্তা যায় ‘কাজ শেষ’। এরপর মুসা দুবাই থেকে ওমানে গেছেন বলে গত মাসেই সংবাদপত্রে খবর আসে। এদিকে বাংলাদেশের পুলিশও মুসাকে ধরার জন্য ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে।

জেইউ/এসএসএইচ