বাবার বয়স হয়ে গেছে ছেলের চেয়ে কম। মায়ের নামের জায়গায় এসেছে বাবার। অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) এ ধরনের ভুল রয়ে গেছে। তথ্যে এমন ভুলের জন্য বিপাকে পড়তে হয়, আবার তা সংশোধনে গিয়েও অনেককে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। 

জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল তথ্য সংশোধনে গিয়ে ভোগান্তির কথা কারও অজানা না থাকলেও জানা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাত্র ১০ জন কর্মকর্তার কাছে ৬৯ হাজার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ফাইল আটকে আছে। এখন পর্যন্ত ইসির ১০টি আঞ্চলিক কর্মকর্তারা ‘গ’ ক্যাটাগরিতে সংশোধিত ফাইল নিষ্পন্ন করেছেন ২১ হাজার ৪২৭টি আবদেন। এ ক্যাটাগরিতে দশ জন কর্মকর্তার কাছে এখনও অনিষ্পন্ন রয়েছে ৬৯ হাজার ৪৯ জনের অবেদন। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, কিছু কর্মকর্তার অবহেলার কারণে এনআইডি সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককে। অনেক সেবাগ্রহীতা মাসের পর মাস ঘুরেও সেবা পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যেই এ ভোগান্তি দূর করতে এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) অনিয়ম ও ভোগান্তির বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের (২৫ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে ইসি। এনআইডির মো. রশিদ মিয়াকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যর বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। 

ইসি সূত্র জানায়, ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যারা ভোটার হয়েছেন, এমন কয়েক কোটি ভোটারের দুই নম্বর ফরম ইসির অনলাইনে নেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ফেলে রাখায় এসব ফরমের মধ্যে বেশিরভাগ ফরম নষ্ট হয়ে গেছে। ভোটাররা নিজ হাতে পূরণ করেছিলেন এ ফরম। সেটি এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ইসির অপারেটররা এনআইডিতে ভুল লিখলেও সেটা চেক করার সুযোগ পাচ্ছেন না কেউ। এখন ভুল এনআইডির সংশোধন করতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন ভোটাররা। কোটি নাগরিকের নথি ইসির অবহেলায় নষ্ট হয়েছে। 

এনআইডির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের নিউজ হচ্ছে। গণমাধ্যমের নিউজগুলো আমলে নিয়ে ইসি থেকে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম

এনআইডি সেবা আধুনিক করতে ২৬ এপ্রিল ২০২০ থেকে অনলাইনে এনআইডি সেবা কার্যক্রম চালু করে ইসি। ক, খ, গ ও ঘ ক্যাটাগরি করে সংশোধনের জন্য মাঠপর্যায়ের নির্বাচন অফিসারদের সংশোধন দায়িত্ব দেওয়া হয়। ‘ক’ ক্যাটাগরিতে থানা নির্বাচন অফিসররা এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬২৮ অবেদন নিষ্পন্ন করেছেন। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৫৩ হাজার ৬৯৬ জনের আবেদন। এই ক্যাটাগরির আবেদন উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার নিষ্পত্তি করে অনুমোদন দিতে পারেন।  

‘খ’ ক্যাটাগরিতে জেলা নির্বাচন অফিসার নিষ্পন্ন করেছেন ৪৭ হাজার ২৫৭ জনের অবেদন, অনিষ্পন্ন রয়েছে ৪৩ হাজার ৭৭৩ জনের আবেদন। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নিষ্পন্ন করেছেন ২১ হাজার ৪২৭ জনের অবেদন, এ ক্যাটাগরিতে দশ জন কর্মকর্তার কাছে অনিষ্পন্ন রয়েছে ৬৯ হাজার ৪৯ জনের অবেদন। সব থেকে বেশি আবেদন এই ক্যাটাগরিতে রয়েছে। এছাড়া এনআইডির মহাপরিচালকের ‘ঘ’ ক্যাটাগরিতে নিষ্পন্ন করা হয়েছে মাত্র ৩১২ আবেদন, অনিষ্পন্ন রয়েছে ১২৪৬ জন ভোটারের অবেদন।

ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন আসে ১৪ হাজার ২৪২টি। এর মধ্যে তিনি বাতিল করেন ২ হাজার ৭০০টি আবেদ। অনুমোদন দেন ২০০টি আবেদন। তদন্ত ও ডকুমেন্ট চান ৭৯টি ফাইলে। আটকা রয়েছে ১১ হাজার ২৬৩ ফাইলে। এসব ফাইলে এখনো কোন কিছু করেননি এ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এনআইডির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের নিউজ হচ্ছে। গণমাধ্যমের নিউজগুলো আমলে নিয়ে ইসি থেকে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। মূলত অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোটারদের এনআইডি সংশোধনীর ফাইল আটকে থাকার বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরই ফাইল আটকে থাকার সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারবো।

এসআর/এনএফ