র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণের ১২ ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্র-মাদকসহ সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারসহ অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে বিষয়টি জানিয়েছেন র‍্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক এএসপি (মিডিয়া) মাজহারুল ইসলাম।

তিনি জানান, ১১ জুন বিল্লাল হোসেন (৫০) নামে এক অভিভাবক রাত ২টার দিকে র‍্যাব-৪ বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন, দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তার ছেলে মো. রানা আহমেদকে (১৯) র‌্যাব পরিচয়ে কিছু লোক একটি সাদা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। পরে তার কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি দল রোববার (১২ জুন) রাজধানীর পল্লবীতে সাগুপ্তা হাউজিং লিমিটেডে নিঝুম সমিতির প্লটের কাশবনে এবং মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়াতে অভিযান চালিয়ে করে অপহৃত রানাকে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি গুলি, ৯৮ পিস ইয়াবা, র‍্যাব জ্যাকেট, সেনা আইডি কার্ড, ভুয়া র‍্যাব আইডি কার্ড, র‍্যাব লোগো সংবলিত স্টিকার, র‍্যাব মনোগ্রামযুক্ত মাস্ক জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. আশিকুর রহমান (২৯), শাহ মো. দোজাহান (২২), মো. মিঠুন (১৮), হাবিবুর রহমান (২৭) ও শরিফুল ইসলাম (৩২)।

অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, গত ১১ জুন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী মো. রানা আহমেদ মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন সাফুল্লী স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ইনাম ক্লাবের সামনে পৌঁছামাত্র র‌্যাবের জ্যাকেট ও র‌্যাবের লোগো সংবলিত মাস্ক পরিহিত কয়েকজন লোক র‌্যাব পরিচয় দিয়ে পথরোধ করেন, মাথায় পিস্তল ঠেকান এবং পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে তাকে মাদক কারবারি হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে যান।

পরবর্তী সময়ে রাত ১১টার দিকে অপহরণকারী দলের এক সদস্য ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার বাবার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। টাকা না দিলে ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রয় করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন। ভুক্তভোগীর বাবা মুক্তিপণের ১৫ লাখ টাকা কমানোর জন্য বার বার অনুরোধ করে শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকায় অপহরণকারীদের রাজি করাতে পারেন। মুক্তিপণের পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীর বাবাকে মিরপুর-১ নম্বরের গোল চত্বর এলাকায় আসতে বলেন।

সে সময় আভিযানিক দলের পরিকল্পনায় ও তত্ত্বাবধানে ভুক্তভোগীর বাবা মুক্তিপণের টাকাসহ মিরপুর-১ পৌঁছালে অপহরণকারীরা স্থান পরিবর্তন করে মিরপুর ডিওএইচএসের ১ নম্বর গেটে আসতে বলেন। সেখানে চক্রের এক সদস্য উপস্থিত হলে র‌্যাব-৪ এর দলটি তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পল্লবীর মিরপুর সাগুপ্তা হাউজিং লিমিটেড সমিতির প্লট থেকে ভুক্তভোগী রানাকে উদ্ধার করা হয় এবং আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।  পরে অপহরণকারী দলের মূল সহযোগী হাবিবুর রহমান এবং আরেক সহযোগী শরিফুল ইসলামকে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা পরস্পর পূর্ব পরিচিত। ভুক্তভোগীর বাবা এলাকার চাল ব্যবসায়ী। তার পরিবার তুলনামূলকভাবে অর্থশালী হওয়ায় প্রতিবেশী শরিফুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাকি অপহরণকারীরা পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে অপহরণ করেন। অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের অভিযানে র‌্যাবের পাঁচ সদস্য আহত হয়। অপহরণকারীর মূল সদস্য মো. আশিকুর রহমানের বাড়ি রাজশাহী জেলায়।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান র‍্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক এএসপি (মিডিয়া) মাজহারুল ইসলাম।

জেইউ/আরএইচ