শ্রম আইন সংশোধনের দাবি
প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ/ ছবি- ঢাকা পোস্ট
শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারাকে কালো আইন বলে আখ্যা দিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট। সংগঠনটি আইনটির ২৩, ২৬, ২৭ (৩ক), ১৭৯ (২.৫), ১৮০ (১খ), ২৩২ (৩) নং ধারাসহ শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
আজ (শুক্রবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। একই সঙ্গে সংগঠনটি শ্রমিক হয়রানি ও নির্যাতনমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আইএলও কনভেনশন অনুস্বাক্ষরের দাবিও জানায়।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যারা জীবন দিয়েছিলেন, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই শ্রমজীবী মানুষ। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রতিদিনের কর্মভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের ঔপনিবেশিক আইন দ্বারা। ২০০৬ সালের ১১ অক্টোবর স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন শ্রম আইনের গেজেট প্রকাশিত হলেও ঔপনিবেশিক শাসকেরা শ্রমিকের যেসব অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকেরা সেসব অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের প্রতিবাদের মুখে ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই শ্রমজীবী মানুষ প্রতারিত হয়েছে, তাদের অধিকার আরও সংকোচিত হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, শ্রমিকদের চাকরি অবসানকালীন সুবিধা যাতে মালিকরা আত্মসাৎ করতে পারে শ্রম আইনের ছত্রে ছত্রে সেই সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের মুনাফায় অংশগ্রহণের অধিকার কৌশলে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অর্জিত ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি, দৈনিক কর্মঘণ্টা, শ্রম আদালতের বিচারকাজ সম্পন্নের সময়সীমা, শ্রমিকের লে-অফকালীন সুবিধা, কারখানা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে শ্রমিকের চাকরি হারানোর ইস্যুসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে সুকৌশলে মালিকের স্বার্থ নিরঙ্কুশভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ শ্রমিকদের সঙ্গে উপহাসের নামান্তর।
বিজ্ঞাপন
তারা আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা সম্পদ সৃষ্টির কারিগর শ্রমিক। অথচ রাষ্ট্র পুঁজির মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় আইএলও কনভেনশন অনুসারে শ্রমিকের মানসম্মত জীবনধারণের অধিকার, স্বাধীনভাবে সংগঠিত হওয়া ও দরকষাকষির অধিকারের স্বীকৃতি দেয়নি।
শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম আইন নর্দমায় নিক্ষিপ্ত হবে বলে সমাবেশে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। বক্তারা বলেন, সম্প্রতি শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সংশোধনীতে শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাগুলো বাতিল, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু বা পঙ্গুত্বে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আজীবন আয়ের সমান নির্ধারণ, সব শ্রমিকের মুনাফায় অংশগ্রহণ, অবসানকালীন সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্যের সঙ্গে মজুরি নির্ধারণের সুযোগ এবং আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুসারে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। না হলে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী শ্রম আইন নর্দমায় নিক্ষিপ্ত হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল, সহ-সভাপতি খালেকুজ্জামান লিপন, যুগ্ম সম্পাদক খুরশিদ আলম মিথুন, অর্থ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরিফ প্রমুখ।
এমএইচএন/এইচকে