রমজানের ঈদের পর সয়াবিন তেলের বাজারে যে সংকট তৈরি হয় তাতে দেশের ৬-৭টি রিফাইনারির ভূমিকা ছিল। তবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ব্যবস্থা নিলে সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হতো এবং তখন ৫শ টাকায় তেল কিনতে হতো বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

সোমবার (১৩ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংগঠনটির সদস্যদের অংশগ্রহণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সয়াবিন তেলের রিফাইনারি এখন ৬-৭টা প্রতিষ্ঠানের হাতে। ঈদের সময়ের সংকটের পেছনে তাদেরও সমস্যা পেয়েছি। কিন্তু অ্যাকশন নিতে পারিনি, তবে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে আমাদের কাজ করতে হয়েছে, এটাও একটা পলিসি। কখনো কখনো চাইলেও অ্যাকশন নেওয়া সম্ভব হয় না, অন্যভাবে কাজ করতে হয়।

এরপরও আমরা যখন বসলাম তখন ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে ব্লেইম গেইম শুরু করে দিলেন, কিন্তু সমস্যা সবার মধ্যেই পাওয়া গেছে। আমরা যখন অভিযান করলাম তখন দেখলাম লাখ লাখ লিটার তেল বেরিয়ে আসছে। অর্থাৎ নিজেরা যোগসাজশ করে বাজারে সংকট তৈরি করেছে।

অসাধু ব্যবসায়ীদের বাজার কারসাজি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা ১৬০ টাকা তেলের লিটার বেঁধে দেওয়ার পর সে মূল্য ঠিক জায়গায় আনতে ১৫ দিন সময় লেগেছে। আমরা আসলে খেয়াল করেছি যখন দাম বেড়ে যায় তখন একদিন পরই বাড়তি দাম নেওয়া হয়। কিন্তু যখন দাম কমে তখন আর ব্যবসায়ীদের স্টক ফুরায় না।

উল্লেখ্য, গত রোজার ঈদের আগে ইন্দোনেশিয়ার পামওয়েল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দেশের বাজারেও অস্থিরতা শুরু হয়। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য সরকারকে চাপাচাপি করলেও সরকার দাম বাড়ানোর অনুমতি দেয়নি। যে কারণে ব্যবসায়ীরা তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেন। বাজারে ১৬০ টাকার তেল ২০০ টাকা দিয়েও অনেকে কিনতে পারেননি।  

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঈদের পরের প্রথম কার্যদিবসেই তেলের দাম বৃদ্ধির অনুমতি দেয়। এরপর থেকে তেলের সরবরাহ বাড়তে শুরু করে। তখন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু ব্যবসায়ীরা কথা রাখেনি।

এরপরই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারাদেশে অভিযান শুরু করে এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যবসায়ীদের কাছে লাখ লাখ লিটার তেলের মজুত পাওয়া যায়। একই অবস্থা তৈরি হয়েছে চালের দাম নিয়েও।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বোরো মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। কিন্তু মাত্র ১০ দিনের মধ্যে মণপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে গেল। আমরা খুঁজতে গিয়ে এমন লোকজনকে পেলাম যাদের লাইসেন্স নেই অথচ শত শত মণ ধান মজুত করেছে।

বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কোনো ধরনের সংহযোগিতা করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজার কমিটির লোকজনই মজুতের সঙ্গে জড়িত থাকে। তারা চায় অভিযানের আগে আমরা যাতে তাদেরকে জানাই। বাজার কমিটি এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, অথচ তারা নিয়মিত কমিটমেন্ট করছে। অথচ বাজার কমিটি ঠিকমত কাজ করলে আমাদের অভিযানই দরকার পড়ে না।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুর সভাপতিত্বে ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তৌহিদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব।

অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ভোক্তারা বিভিন্ন সেবা ও পণ্য কেনার সময় তারা যদি অধিকার বঞ্চিত হয় তবে তারা আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারে। এখন অবশ্য সারাদেশের মাত্র ২১৭ জন কর্মকর্তা দিয়ে অভিযোগের বাইরেও বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

সেমিনার সমন্বয় করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস, আফরোজা রহমান, সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস প্রমুখ।

এসআই/জেডএস