৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৫ জুন) সকালে মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে দুপুর ১২টায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ এক জনসভার আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় যোগদান ও ভাষণ দেবেন।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশাল সমাবেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক। 

পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত অনুষ্ঠানস্থলটি ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বিশিষ্ট একটি প্রতীকী অস্থায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে জমকালোভাবে সাজানো হয়েছে। প্রতীকী সেতুর সামনে উদ্বোধনী মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। অস্থায়ী সেতুটি ২০০ ফুট লম্বা ও ৮ ফুট চওড়া। মঞ্চটি ১৫ ফুট লম্বা এবং ৪০ ফুট চওড়া। মঞ্চের সামনে একটি ৬০ ফুট লম্বা বিশালাকার নৌকা পানিতে ভাসছে। এ ছাড়া সেখানে বেশ কিছু ছোট নৌকাও রয়েছে। প্রায় ১৫ একর জায়গার ওপর ভেন্যু প্রস্তুত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠান উপলক্ষে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠান মঞ্চ প্রাঙ্গণে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্য, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এবং এসএসএফ সদস্যরা অনুষ্ঠানস্থলে কাজ করছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ শুক্রবার কাঁঠালবাড়ির অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সমাবেশের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মির্জা আজম আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভার পর এ সমাবেশটি দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ হবে।

ড. বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথে সব পয়েন্ট ও মোড়ে চেকপোস্ট বসানোসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, নজরদারির জন্য আধুনিক ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।

বিশাল জনসমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে ৫০০ অস্থায়ী টয়লেট, ভিআইপিদের জন্য ২২টি টয়লেট, বিশুদ্ধ পানি, একটি ২০ শয্যা ও দুটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও রাখা হবে।

পুরো মাদারীপুর জেলায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে, যেখানে রাস্তা-ঘাটে রঙিন ব্যানার টানিয়ে রাখা হয়েছে। উদ্বোধন উপলক্ষে নেওয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আতশবাজি ও লেজার প্রদর্শন। এ ছাড়া মানুষের মাঝে মিষ্টিও বিতরণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, অনুষ্ঠানটি হবে একটি ঐতিহাসিক আয়োজন। এতে প্রায় ১০ লাখ লোক অংশ নেবে। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।

পদ্মা সেতু শনিবার উদ্বোধন হলেও সেতুর ওপর দিয়ে পরদিন (রোববার) সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। সেতুটি রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ২১টি জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি আনবে। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এই সেতু দিয়ে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পাবে।
 
আরএইচ