প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন তারাও
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একুশের প্রথম প্রহর থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। তেমনই শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী স্মৃতি সংগঠনের সদস্যরা।
তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। তবু রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছেন তারাও। বনানী জোয়ার সাহারা রেলগেট এলাকা থেকে শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের এই দলটি। তাদের হাতে ছিল শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল ও ব্যানার।
বিজ্ঞাপন
ব্যানারে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী স্মৃতি সংগঠন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সকল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।’
তারা বলেন, আমরা বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী স্মৃতি সংগঠন থেকে এসেছি। আজকের এই দিনটি ছোট বড় সকলের কাছে একটি শোকের দিন। এই দিনটি আমরা প্রতিবছরই একবার করে পাই। যাদের জন্য আমরা পেয়েছিলাম মাতৃভাষা, আজকের এই দিনে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্যই আমরা এসেছি। তাদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও মনের ভক্তি দেখানোর জন্যই আমরা আজকে এখানে এসেছি। আমরা যে প্রতিবন্ধী হয়েও আজকে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি সে জন্য আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।
বিজ্ঞাপন
এর আগে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত ১২টা এক মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের সুর বাজতে থাকে। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর তিন বাহিনীর প্রধানরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
পরে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদসহ আনসার গ্রাম ও প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাবি শিক্ষকরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী এবং সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে গিয়ে পুষ্পস্তবক নিবেদন করছেন। সুশৃঙ্খলভাবে তারা শহীদ মিনার এলাকা ত্যাগ করছেন।
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান নিরাপদ রাখতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের এই দিনে (২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা ভাষা আন্দোলনকে দমন করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বাংলা ভাষার দাবিতে রাজপথে মিছিল করেন। সেই মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে। আহত হন আরও অনেক ভাষাপ্রেমী।
টিএইচ/এসএসএইচ