বরিশালের মুলাদি সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হুমায়ন কবির। শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি খামারের মালিকও তিনি। এবার গাবতলী পশুর হাটের সবচেয়ে বড় গরুর মালিক এ শিক্ষক। আদর করে গরুটির নাম রেখেছেন ‘রাজা বাবু’। ঈদ বাজারে গরুটিকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রির আশা তার। সঙ্গে একটি ছাগলও ফ্রিতে দেবেন শিক্ষক হুমায়ন কবির।  

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বেলা ৩টা। রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে বিভিন্ন অংশেই ছোট ছোট জটলা। এসব জটলার বেশিরভাগই হাটে ওঠা বড় গরুকে কেন্দ্র করে। হাটের ঠিক মাঝ বরাবর বেশ বড় একটি জটলা লক্ষ্য করা যায়। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই জটলা কীসের জন্য। প্রায় এক মিনিটের রাস্তা হেঁটে গিয়ে দেখা যায়, এ জটলা বরিশালের রাজা বাবুকে ঘিরে। যারাই গরুটিকে দেখছেন তারাই বলছেন, আজকের দিনে গাবতলী হাটের সব থেকে বড় গরু এটি! কেউ কেউ বড় গরু পেয়ে মোবাইলে ছবি তুলে রাখছেন। সঙ্গে গরুর মালিকের কাছে গরুর দামও জানতে চাইছেন।

সেখানে ঢাকা পোস্টের কথা হয় রাজা বাবুর মালিক হুমায়ন কবিরের সঙ্গে। তিনি জানান, এটি হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। এ গরুর বয়স সাড়ে চার বছর। বরিশালের মুলাদি থেকে বিক্রির জন্য এ গরু নিয়ে এসেছেন। আর এটার দাম হাঁকছেন ২০ লাখ টাকা। ফিতার মাপে এ গরুর ওজন ১ হাজার ৫৯৬ কে‌জি অর্থাৎ ৪০ ম‌ণের বে‌শি মাংস হবে। সঙ্গে ২৫ হাজার টাকার একটি খাসি ফ্রি দেওয়া হবে।

হুমায়ন জানান, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে রাজা বাবুকে ৯৮ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন তিনি। দৈনিক এ গরুর পেছনে তার ১ হাজার টাকার বেশি খরচ আছে। খাবার হিসেবে দিতে হয়, গম ও চালের ভুষি, চাষ করা ঘাস আর সামান্য পরিমাণে ভালো জাতের ক্যাটেল।

বছরখানেক আগেও রাজা বাবুকে গাবতলীর হাটে এনেছিলেন তিনি। ওই বছর কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বাড়ি নিয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে হুমায়ন বলেন, গত কোরবানির ঈদেও বিক্রি করার জন্য রাজা বাবুকে গাবতলীর হাটে এনেছিলাম। গত বছর ১৫ লাখ টাকা দাম চাই। কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারিনি। এবছর গাবতলীতে আনতে শুধু ট্রাকের খচরই দিতে হয়েছে ২২ হাজার টাকা। এ গরুর পেছনে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ তো খরচ হয়েছে।

এবার বিক্রি করতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা তো করি পারব। ভালো দামের আশায় গতবার  বিক্রি করিনি। এবার আশা করছি ভালো দাম পাব। বাকিটা আল্লার ইচ্ছা। ক্রেতা আসছে। গতকাল রাতে এক ক্রেতা এসে ১০ লাখ বলল। ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি। হাটের সবাই বলছে, এটাই সবচেয়ে বড় গরু।

রাজা বাবু নামকরণের কারণ জানতে চাইলে দর্শনের এ অধ্যাপক বলেন, আমাদের ফার্মের যে কর্মচারী আছেন তার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তার একটা গরু ছিল। সেটার নাম ছিল রাজা বাবু। ওটা নাকি অনেক দামে বিক্রি করছিলেন তিনি।  এ নামটা উনি রেখেছেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি খামার সামলানোর সময় বের করেন কীভাবে, জানতে চাইলে হুমায়ন এক গাল হাসি দিয়ে বলেন, আসলে একটা চাকরি করে পরিবার চালানো কঠিন। শখের বসেই ফার্ম করা। সকালে এবং বিকেলে ফ্রি সময়ে খামার দেখাশোনা করি। আর কর্মচারী রাখা আছে, তারা দেখেন।

আর মাত্র তিনদিন পরেই দেশে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত পশু দেখা গেলেও এখনও হাটগুলোতে সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি। তবে বুধবারের তুলনায় আজ গাবতলীর পশুর হাটে ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।

এবার উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বসানো হয়েছে ৮টি অস্থায়ী পশুর হাট। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসেছে ১০টি অস্থায়ী হাট। পাশাপাশি ডিজিটাল হাটের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এনআই/এসকেডি