গরুর শরীরে বাতাস দিচ্ছেন কেউ, কেউবা ব্যস্ত খাওয়ানোয়। নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন কেউ কেউ, আবার কেউবা ব্যস্ত খাবার রান্নায়। রাজধানীর আফতাবনগর পশুর হাটে বৃহস্পতিবারের চিত্র ছিল এমনই।

হাটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি তেমন একটা ছিল না দিনভর। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার গরুর বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার দিনভর আফতাবনগর হাটে ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলক অনেক কম। যদিও বিকেলের পর থেকে কিছু ক্রেতারা হাটে আসেন, তবুও গরু কেনার চেয়ে দরদাম জানার আগ্রহই ছিল তাদের মধ্যে বেশি।

পাবনা থেকে ১৩টি গরু নিয়ে চার দিন আগে আফতাবনগর হাটে এসেছেন সিরাজুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, এবার লস খেয়ে যাই কিনা, তা নিয়েই দুশ্চিন্তা। কারণ চার দিন হয়ে গেল গরু বিক্রি হয়েছে মাত্র দুটি। আরও ১১টি গরু বিক্রি বাকি। এ ছাড়া ক্রেতার সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক কম। এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, হাটে আসা লোকের সংখ্যার চেয়ে গরুর সংখ্যাই অনেক বেশি। এবার গরুর চাওয়া দাম কিছুটা বেশি এটা ঠিক। ক্রেতা না থাকা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার।

কুষ্টিয়া থেকে আসা দুলাল মিয়া নামে এক গরু ব্যবসায়ীও তার হতাশার কথা জানালেন। তিনি বলেন, সাতটি গরু এনেছি। কিন্তু একটিও এখনো বিক্রি হয়নি। হাটে ক্রেতা নেই, কেউ দামও বলছে না। আমরা হাটে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। তবে আশাবাদী আগামীকাল থেকে ক্রেতা আসতে পারে।

এ বছর গরুর দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে জানিয়ে মেহেরপুর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম এক বছরে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনিভাবে গরুর খামারের দামও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাই গরু পালনকারীর কাছ থেকেই আমাদের বাড়তি দামে গরু কিনতে হয়েছে। ফলে আমরাও হাটে একটু বাড়তি দাম চাচ্ছি। তবে হাটে ক্রেতাদের সংখ্যা একেবারেই কম। বিক্রেতারা তাদের গরু বিক্রি করার জন্য ক্রেতাই খুঁজে পাচ্ছেন না।

রাজধানীর গোড়ান এলাকা থেকে আফতাবনগর হাটে গরু কিনতে এসেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী রহমতুল্লাহ। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ হাটেই গরু কিনতে আসি, তবে এ বছর গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। গত বছর যে গরু দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই গরু এবার বিক্রেতারা দুই লাখ, আড়াই লাখ টাকা দামের নিচে দিচ্ছেন না। দুপুর থেকে যে কটি গরুর দাম করেছি, সবগুলোরই বাড়তি দাম চেয়েছেন বিক্রেতারা। তবে এটাও ঠিক, হাটে ক্রেতার সংখ্যা কম, সে তুলনায় গরু অনেক বেশি।

কেন ক্রেতা কম, এর একটি যুক্তি দেখিয়ে খিলক্ষেত থেকে আসা ক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, আসলে ঢাকা শহরে যারা থাকেন, কোরবানি দেন, তাদের সবার বাসাই গরু রাখার সমস্যা। তাই সাধারণত ঢাকার ক্রেতারা ঈদের আগের দিনে বেশি গরু কেনেন। এ কারণে এখনো হাটে গরুর ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। এছাড়া সবাই বিভিন্ন হাট ঘুরছে। এখন দরদাম জেনে শেষ দিনে মানুষ বেশি গরু কিনবে।

এএসএস/আরএইচ