ঈদুল আজহার আর মাত্র ৩ দিন বাকি। এখনও জমে উঠেনি রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট। এখন পর্যন্ত যারা হাটে আসছেন তারা গরু দেখে দর-দাম করে চলে যাচ্ছেন। ক্রেতা খুব কম, তবে বিক্রেতা অনেক বেশি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন শাহজাহানপুর হাটে আসা গরুর বেপারীরা।

তবে তাদের আশা বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সরকারি-বেসরকারি অফিসের শেষ কর্মদিবস। কাল থেকে ঈদের ছুটি শুরু। সেদিন মানুষ সময় নিয়ে বাজারে আসবেন, কোরবানি জন্য পছন্দের পশুও কিনবেন। 

কোরবানির পশুর হাট জমে না উঠলেও গরুর দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পরস্পর বিরোধী অভিযোগ রয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, বেপারীরা কোরবানির পশুর দাম বেশি চাচ্ছেন। 

অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেশি। শুধু তাই নয়, হাটে গরু আনতে অনেক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়েছে। এছাড়াও গুরুর সঙ্গে ঢাকায় আসা মানুষদের থাকা-খাওয়ার খরচও গত বছরের চেয়ে বেশি গুনতে হচ্ছে। সব খরচ গরু বিক্রি করে তুলতে হবে। তাই গরুর দাম গত বারের চাইতে একটু বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক ।

ঝিনাইদহ থেকে ১৯টি গরু নিয়ে গত ৩ তারিখ বেপারী শাহিন মিয়ার নেতৃত্বে ৬ জন ঢাকায় এসেছেন। তারা বলেন, গত ৪ দিনে মাত্র ১টি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। বাকি ১৮টি গরু এখনও অবিক্রিত। মানুষ গরুর দর-দাম করে চলে যাচ্ছেন। ঈদের আর মাত্র ২ দিন বাকি আছে, ফলে শুক্রবার-শনিবার গরু বিক্রি হবে বলে আশা করছি। 

শাহিন মিয়ার ১৮টি গরু মধ্যে একটির নাম মমতাজ। কালো রঙের উঁচা-লম্বা এ গরু হাটের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ। তাই এর দামও ৩ লাখের উপর চাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মমতাজের খাওয়ার পেছনে দৈনিক দুইশ টাকার মতো ব্যয় হয়। গরুটির ওজন মোটামুটি ৭-৮ মণের মতো হবে। তিন লাখের উপরে এ গরু বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

বেপারীরা গরুর দাম বেশি চাচ্ছে- ক্রেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন মিয়া বলেন, গত এক বছরে গো-খাদ্যের দাম কেমন বেড়েছে তা কি জানেন? এছাড়া সব কিছুর দামও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি এখন ১ হাজার টাকার কাছাকাছি। তাহলে আমার কিভাবে সস্তায় গরু বিক্রি করব। গরু বিক্রি করে কিছু টাকা না পেলে আমরা চলবো কিভাবে। এছাড়া ৬ জন মানুষ ঢাকায় আসছি, প্রতিদিন থাকা-খাওয়া ৮-৯ হাজার টাকা লাগে, সেগুলো কই পাবো।

শাহিন মিয়ার মতো পাবনা থেকে ৩০টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন বাবু কসাই। এ পর্যন্ত তিনি ৬টা গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। তার আশা, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বাকি গরুগুলো বিক্রি হয়ে যাবে।

বাবু কসাই বলেন, এখন পর্যন্ত ৬টা গরু বিক্রি করেছি। তবে, এগুলোতে খুব বেশি লাভ হয়নি। কিছুটা কম দামে গরু বিক্রি করে দিতে হয়েছে। কারণ ঢাকাতে থাকা-খাওয়ার টাকা লাগবে। সেই টাকা না থাকায় কিছুটা লাভে গরুগুলো বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তবে, বাকি গরুগুলোতে আশানুরূপ লাভ হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় যারা কোরবানি দেন, তারা দুই-এক দিন আগে গরু কেনেন। কারণ ঢাকাতে গরু রাখা, লালন-পালন করা অনেক ঝামেলা। তাই মানুষ আগে গরু কিনতে চায় না। এ কারণে কাল-পরশু ঢাকার গরুর হাট জমে উঠবে। বিক্রিও বাড়বে। 

রাজধানীতে এবার মাঝারি গরুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি বলে উল্লেখ করে বাবু কসাই বলেন, তার ৩০টি গরুর মধ্যে ২টি গরু বড়। এগুলোর দাম আড়াই লাখের বেশি হলে বিক্রি করব। মানুষ এগুলোর দাম জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু কোনো দাম বলে না। মাঝারি আকারের গরুগুলো নিয়ে সবার আগ্রহ বেশি।

হাটে আসা ক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলানয় এবার গরুর দাম একটু বেশিই চাচ্ছেন বেপারীরা। এর কারণ গোখাদ্যের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি এবারের বন্যায় সারাদেশে অনেক গরুও মারা গেছে। তাই চাহিদার তুলনায় বাজারে গরু কম হওয়ায় বেপারীরা দাম বেশি চাচ্ছেন।

ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব মিয়া ছেলেকে নিয়ে শাহজাহানপুর হাটে এসেছেন গরু দেখতে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরু পছন্দ হলে দামে হয় না। আবার যেটা দামে হয়, সেটা পছন্দ হয় না। এ কারণে এখনও গরু কিনতে পারছিনা।

তিনি আরও বলেন, গত বছর যে গরু ১ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম, সেরকম গরু এবার বেপারীরা ২ লাখের বেশি চাচ্ছেন। দামের এতো তফাত হলে মানুষ কিভাবে গরু কিনবেন?

শুধু আব্দুল ওহাব নয়, তার মতো প্রায় সব ক্রেতাদের দাবি, এবার বাজারে গরু দাম গতবারের চেয়ে অনেক বেশি।

এএইচআর/আইএসএইচ