দুই দশকের বেশি সময়ের দাবি ও আন্দোলনের মুখে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের পদোন্নতি, বেতনস্কেল উন্নীতকরণ এবং নতুন পদ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন নিয়ে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

জানা গেছে, নতুন পদ সৃষ্টি, পদোন্নতি ও বেতনস্কেল উন্নীতকরণের সারসংক্ষেপ ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ১৩-১৫তম গ্রেডের কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তন ও বেতনস্কেল উন্নীত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলায় কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হবে। ৮ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ৮টি শাখা কর্মকর্তা বা সেকশন অফিসারের (গ্রেড-৯) পদ সৃষ্টি হচ্ছে। 

জানা গেছে, বিশেষ ক্যাটাগরিতে ক-ক্যাটাগরির ৬ জেলার প্রতি জেলায় ৩টি করে ১৮টি মোট শাখা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি হচ্ছে। খ- ক্যাটাগরির ২৬ জেলার প্রতি জেলায় ২টি করে ৫২, গ- ক্যাটাগরির ৬ জেলার প্রতি জেলায় ১টি করে ৬টি এবং ৬৪ জেলার সদর উপজেলায় ১টি করে ৬৪টিসহ সর্বমোট ২১৮টি শাখা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া সারসংক্ষেপে বলা হয়, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাঠ প্রশাসনে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকারের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সমন্বয়সহ মাঠ প্রশাসনের যাবতীয় কার্যক্রম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এসব কার্যালয়ে কর্মরতরা উল্লিখিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে দাপ্তরিক কাজ শেষ করেন। 

এতে আরও বলা হয়, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পর ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সচিবালয় এবং সরকারের অনেক দপ্তরের কর্মচারীদের পদ পরিবর্তন, বেতনস্কেল উন্নীতকরণ ও পদোন্নতির বিধিমালা যুগোপযোগী করা হলেও মাঠ প্রশাসনের কার্যালয়গুলোর কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তন, বেতনস্কেল উন্নীত করা হয়নি। এ অবস্থায় ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তন, বেতনস্কেল উন্নীতকরণসহ নিয়োগবিধি সংশোধন বা নতুন করে প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মরত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন গ্রেড অনুযায়ী পদের নাম পরিবর্তন এবং সচিবালয়ের কর্মচারীদের মতো পর্যায়ক্রমে পদোন্নতির জন্য নিয়োগবিধি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে জানতে সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাফর ইকবাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরা মিটিং করেছিলাম। কিছু পদের আপগ্রেডের বিষয়ে সুপারিশও করেছিলাম।'

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩-১৫তম গ্রেডের কর্মচারীদের পদ পরিবর্তন করে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা (গ্রেড-১৩) করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রধান সহকারী (গ্রেড-১৪), ট্রেজারি হিসাবরক্ষক (গ্রেড-১৪), সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (গ্রেড-১৪), পরিসংখ্যান সহকারী (গ্রেড-১৪) এবং উচ্চমান সহকারী (গ্রেড-১৫) পদগুলোর বেতনস্কেল ১৩তম গ্রেডে উন্নীত হচ্ছে। 

অন্যদিকে, নাম পরিবর্তন করে ১৩তম গ্রেড বেতনস্কেলে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হচ্ছেন উপজেলা কার্যালয়ে কর্মরত সিএ কাম উচ্চমান সহকারী (গ্রেড-১৩), সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর (গ্রেড-১৩), প্রধান সহকারী (গ্রেড-১৪), সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (গ্রেড-১৪) এবং উচ্চমান সহকারী (গ্রেড-১৫)। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) আলি কদর সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতি রয়েছে, তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'কিছু পদের নাম পরিবর্তন এবং কিছু পদের আপগ্রেড হবে। মাঠ প্রশাসনের যে সমস্যাগুলো আছে এ সমস্যার সমাধানে ও পদের পরিবর্তন করা নিয়ে কাজ চলছে।'

একই কথা বলেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (প্রশাসন অধিশাখা) আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।'

এসএইচআর/এসএম