পাশের ফার্মেসিতেই দ্বিগুণ দামে মেলে আহসান মঞ্জিলের টিকিট!
টিকিট কিনছেন এক নারী
ট্রেন, বাস, লঞ্চ, সিনেমা, খেলার টিকিট কালোবাজারির কথা প্রায়ই শোনা গেলেও কোনো দর্শনীয় স্থানের টিকিট কালোবাজারির কথা সচরাচর শোনা যায় না। তবে এবার শোনা গেল, রাজধানীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান আহসান মঞ্জিলে প্রবেশের টিকিটও কালোবাজারি হচ্ছে, তাও আবার ওষুধের দোকানে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিলে প্রবেশের টিকিট কাউন্টারে বিক্রির পাশাপাশি বিক্রি হয় অনলাইনেও। যে দর্শনার্থীরা কাউন্টারে পান না, তারা চেষ্টা করেন অনলাইনে। আর অনলাইনে টিকিট কাটতে ব্যর্থ হলে তারা যান মঞ্জিলের পাশের একটি দোকানে। কেননা সেই দোকানেই মেলে কাঙ্ক্ষিত টিকিট। অনলাইনে যেখানে একসঙ্গে চারটি টিকিট কাটা যায়, সেখানে দোকানদার একসঙ্গে দিচ্ছেন ছয়টি টিকিট। শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগে আহসান মঞ্জিলের টিকিট পাওয়া যেত কাউন্টারে। করোনায় সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর গত বছরের ২৩ আগস্ট থেকেই দর্শনার্থীর সংখ্যা সীমিত রেখে অনলাইনে টিকিট কাটার সিস্টেম চালু হয়। চলতি বছরের ৮ জুলাই থেকে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও (কাউন্টারে) টিকিট চালু করে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
আজ (শুক্রবার) ছুটির দিন এক হাজার টিকিট অনলাইনে ও এক হাজার টিকিট অফলাইনে (কাউন্টারে) বরাদ্দ করা হয়। দর্শনার্থীদের চাপ থাকায় বিকেলের দিকে কাউন্টারে টিকিট শেষ হয়ে যায়। শেষ হয় অনলাইনেও। এরপরই টিকিটপ্রত্যাশীরা ভিড় করেন মঞ্জিলের পাশের স্বরূপকাঠি মেডিকেল হলে। সেখানে মেলে টিকিট। তবে ২০ টাকার টিকিট কিনতে খরচ করতে হয় ৪০ টাকা।
রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে আসা আকরাম হোসেন কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে অনলাইনে চেষ্টা করেন। সেখানেও না পেলে খোঁজ নিয়ে যান ও স্বরূপকাঠি মেডিকেল হলে। সেখানে গিয়ে টিকিট চাইতেই মেডিকেল হলের দোকানি তার হাতে ছয়টি টিকিট তুলে দেন। আকরাম প্রতিটি টিকিট ৪০ টাকা দরে কেনেন। ছয়টি টিকিট কিনতে তার খরচ হয় ২৪০ টাকা।
প্রকাশ্যেই আরও কয়েকজনের কাছে আহসান মঞ্জিলের টিকিট বিক্রি করেন ওই দোকানি। একজনের কাছে বিক্রি করেন চারটি টিকিট, অপর আরেকজনের কাছে বিক্রি করেন দুটি টিকিট। জানতে চাইলে স্বরূপকাঠি মেডিকেল হলের দোকানি মো. মনির সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি ওষুধ বিক্রি করি, আর মোবাইলে টাকা লোড করি, কোনো টিকিট বিক্রি করি না।
টিকিট কালোবাজারি বিষয়ে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের নিরাপত্তা পরিদর্শক মো. হাসিবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য ঈদের আগেই টিকিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও টিকিট দেওয়া হচ্ছে। দর্শনার্থীদের ভিড় থাকায় অনেকে হয়তো সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টিকিট কালোবাজারি করছেন। আমরা লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
আহসান মঞ্জিলের ডেপুটি কিপার মো. সেরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাউন্টারে আমরা শুধু অফলাইনে টিকিট বিক্রি করি। টিকিট নিয়ে কোনো ভোগান্তি নেই এখন। অনলাইনে টিকিট বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেকে নিযুক্ত একটি থার্ড পার্টি । আহসান মঞ্জিলের সামনের কোনো দোকানদার যদি টিকিট বিক্রি করে, তাহলে সেটি তার এখতিয়ার, আমাদের নয়। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। আমরা গেটে লিখে রেখেছি, কেউ কালোবাজারিতে টিকিট বিক্রি করলে তাকে ধরিয়ে দিন।
আইবি/আরএইচ