দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পান লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার বাসিন্দা রেনু বেগম। উপহারের ঘরে এক বছর পার করেছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করেছে তার। দুই শতক জায়গার ওপর বসবাস ছাড়াও আয়ের রাস্তা বের করে ফেলেছেন তিনি।

বুধবার (২০ জুলাই) নিজ ঘরেই জীবন বদলের চিত্র ঢাকা পোস্টের কাছে তুলে ধরেন রেনু। তার ভাষ্য, ৪০ বছরের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বাবা-ভাইদের পরিবারে। বিয়ের পর স্বামীর ভিটায় তিন বছরও থাকতে পারেননি তিনি। কারণ, মেঘনা নদীতে তার স্বামীর ভিটা চলে যায়। নিজের স্বামীর ভিটা হারিয়ে ফেলায় প্রতিনিয়ত নিজেকে নিঃস্ব ভাবতেন রেনু।

রেনু বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর মাইয়াগো আসল ঠিকানা স্বামীর বাড়ি। কিন্তু স্বামীর সব তো নদী নিয়ে গেছে। চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে হতো। এর মধ্যে স্বামীও মারা যান। সবসময় মনে হতো কিছুই নাই আমার। এখন আমার একটা ঘর হইছে। এখানে আসার পর আমার ভাগ্য বদলাইছি। একটা গরু, দুইটা ছাগল, পাঁচটা মোরগ-হাঁস আছে। এগুলা থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকার মতো ইনকাম হয়। কোনো কোনো মাসে ২ হাজার টাকা ইনকাম করছি। এখানে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখে আছি।’

রেনু জানান, দুই শতক জায়গার তিনি পেয়ারা, পেঁপে, আমড়া, জামরুল ও সুপারি গাছ লাগিয়েছেন। তার পেঁপে গাছে পেঁপে আসছে।

মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন সব অসহায় মানুষকে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন, তার আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে গত বছর লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চরঠিকা মোজায় ২৭০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।

ভুলুয়া খাল লগোয়া জয় বাংলা আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, কমবেশি প্রতিটি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। তাদের অনেকের ছেলে-মেয়েরা মাদরাসায় পড়ছে। কারও কারও সেলাইয়ের মেশিন রয়েছে, যা থেকে তারা কিছু আয়েরও ব্যবস্থা করেছেন। অনেক পরিবার হাঁস-মুরগি পালন করেও আয়ের রাস্তা বের করে নিয়েছে।

পুনর্বাসিতরা বলছেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই হওয়াকেই তারা জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন। তারা এখন স্বপ্ন দেখেন সামনে এগিয়ে যাবার, সন্তানদের পড়ালেখা করানোর। পরিবর্তন করতে চান ভাগ্যের চাকা।

এক সময় কমলনগরের লুদুয়া বাজারের পাশেই পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল মো. ইব্রাহিমের। কিন্তু মেঘনার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে কমলনগর উপজেলায় রাস্তার পাশেই বসবাস করতে হয় তার পরিবারকে। ইব্রাহিম বলেন, ‘তিন বছর আগে নদী আমাদের সব নিয়ে গেছে। রাস্তার পাশে থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিয়েছে। চারজন মিলে থাকি। দুই ছেলে মাদরাসায় পড়ে। ঘরটা হওয়ায় ছেলেদের পড়াতে পারছি। 

স্বামীহারা কদ বানু জানান, নদীতে তার স্বামীর ভিটে চলে যাওয়ায় প্রায় এক যুগ রাস্তার পাশে দুই মেয়ে নিয়ে কাটাতে হয়েছে তার। খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে তিনি এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্য বলছে, গত বছরের জুন মাসে প্রথম পর্যায়ে দেশের ভূমিহীন-গৃহহীনদের মধ্য থেকে ৬৩ হাজার ৯৯৯ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমে দেশের পাঁচ জেলার ২৬ হাজার ২২৯টি নতুন পরিবার ঘর পেতে যাচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ঘর উপহার দেওয়ার এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো.আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, জেলার ৩ হাজার ২২৮টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৬৬টি পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুরো জেলায় আরও ৪৩৬টি পরিবার বাড়ি পাবে। জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

এনআই/আরএইচ