ট্রেন আসার আগেই নামানো হয় ক্রসিং প্রতিবন্ধক (ব্যারিয়ার)। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীরা রেললাইন পার হন। পথচারীদের সঙ্গে পার হয় যানবাহনও। রাজধানীর খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ে এটি নিয়মিত চিত্র। অসচেতনতায় যেকোনো সময় এখানে ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।

সোমবার (১ আগস্ট) দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ে অবস্থান করেন ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদক। তিনি দেখতে পান, ক্রসিং ঘিরে গড়ে উঠেছে ফলের ভ্রাম্যমাণ দোকান। এমনকি ক্রসিং প্রতিবন্ধকের নিচেও বসেছে দোকান। এসব দোকানে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চলছে কেনাবেচা।

আরও দেখা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক চালকই রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রেললাইনের ওপর। ট্রেন আসার সিগন্যাল পেয়ে গেটম্যান ক্রসিং প্রতিবন্ধক নামিয়ে দেওয়ার সময় তড়িঘড়ি করে তারা রিকশা সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে পথচারীরা প্রতিবন্ধক নামানোর পরও পার হচ্ছেন রেললাইন।

আরও পড়ুন : রেলক্রসিং কেন অরক্ষিত?

রেল ক্রসিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শতবার নিষেধ করলে মানুষ কথা শোনে না। নিয়ম না মেনে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে  গেলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। তখন সব দোষ হয় গেটম্যানের। আর রেল ক্রসিংকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা দোকানগুলো উচ্ছেদ করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার বসে যায়। স্থানীয় রাজনীতিবিদরা চাঁদা নিয়ে এসব দোকান বসান বলে রয়েছে অভিযোগ। আর এতে অনেকটা অসহায় হয়ে থাকতে হয় গেটম্যানদের।

ট্রেন আসার কারণে ক্রসিং প্রতিবন্ধক নামিয়ে দেওয়ার পর বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে রেললাইন পার হন আব্দুল মোতালেব নামে এক পথচারী। কেন এরকম ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রেন যে এত কাছাকাছি চলে এসেছে, তা খেয়াল করিনি। বাবাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। কোথা থেকে ওষুধ নেওয়া যায়, তা ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম।

আরও পড়ুন : রেলের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা : বন্ধ হবে কবে?

পত্রিকায় ছবি না ছাপানোর অনুরোধ করে মোতালেব বলেন, কেউ তো ইচ্ছে করে জীবনের ঝুঁকি নেয় না। অন্যমনস্ক থাকার কারণে এটা হয়েছে।

শুধু আব্দুল মোতালেব নয়, ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে কাছে চলে এলেও অনেকে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্রসিংয়ে রেল লাইন পার হচ্ছেন নিয়মিত।

রেল লাইনের মাঝখানে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ট্রেন আসার সময় হলে যেকোনো এক পাশে চলে যাব। যাত্রী নেই তো। তাই খ্যাপ মারার জন্য বসে আছি। যাত্রী পেয়ে গেলে এমনিতে চলে যাব।

ক্রসিং প্রতিবন্ধক ধারণকারী খুঁটি ঘিরে পেয়ারা-কাঁঠালের দোকান বসিয়েছেন সালাউদ্দিন। তার কাছে প্রশ্ন ছিল-  এভাবে খুঁটির নিচে দোকান বসানোর কারণে প্রতিবন্ধক নামাতে-উঠাতে সমস্যা হয় কি না। তখন তিনি বলেন, কেন সমস্যা হবে? ব্যারিকেড (ব্যারিয়ার) তো একদম মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। আমার মাল তো নিচে আছে।

খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে পুলিশের সদস্য সুরুজ মিয়া বলেন, মানুষ কথা শোনে না, ট্রেন আসার পরও দৌড়ায়। ট্রেন কাছাকাছি চলে এলেও অনেকে ব্যারিকেডের (ব্যারিয়ার) নিচ দিয়ে পার হয়ে যায়। মানুষ কথা না শুনলে তো আর মারপিট করা যাবে না। আমরা কি করতে পারি?

এএইচআর/আরএইচ