দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধের পথ বেছে নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান। জনদুর্ভোগের বিষয়টি সামনে এনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

একইঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের এ বলেও সাবধান করেছেন যে, আমরা অনেকক্ষণ ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছি। আর কিছুক্ষণ পর আমরা আমাদের  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজন হলে শক্তি প্রয়োগ করবো রাস্তা খালি করার জন্য।     

পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে আজ (বুধবার) সকাল ৯টা থেকে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এরআগে গতকাল রাতেও এই একই এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১০টার সেদিনের মতো সড়ক ছাড়েন তারা। গতকাল সন্ধ্যায় সাত কলেজের পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসার পর বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না তারা

দুপুরের দিকে নীলক্ষেত মোড়ে গিয়ে সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় আন্দোলন করছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নীলক্ষেত এলাকা ও এর আশপাশ এলাকায় রাস্তায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করেছি- জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য তারা যেন রাস্তা ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারা আমাদের এই অনুরোধ রাখেনি।

ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত সাত কলেজের অধ্যক্ষরা এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে গেছেন। অধ্যক্ষরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জানিয়ে গেছেন যে, তারা আজকে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসবেন এবং এই বিষয়ে  সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের জানানো হবে।

তিনি বলেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের অধ্যক্ষের কথা শুনছেন না তারা চাচ্ছেন এক্ষুনি তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হোক। তবে আমরা অনেকক্ষণ ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছি আর কিছুক্ষণ পর আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজন হলে শক্তি প্রয়োগ করবো রাস্তা খালি করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের আবারও রাস্তা ছাড়ার অনুরোধ জানাবো। কেননা নীলক্ষেত ঢাকা শহরের অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এইখানে যানজটের সৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন সারা ঢাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

অধ্যক্ষের আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীর উল্টো ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে শুরু করেন

দুপুর সাড়ে ১২টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে নীলক্ষেতে যান সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ খোন্দকারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক। সাত কলেজের বিষয়ে আজ বিকেলে সিদ্ধান্ত নেব- এ কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের তারা সড়ক ছাড়তে বললেও সে আহ্বান পাত্তা পায়নি শিক্ষার্থীদের কাছে। শিক্ষার্থীরা এ সময় উল্টো ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে শুরু করেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।  

এদিকে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খামখেয়ালি মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ এই সিদ্ধান্ত। অচিরেই পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে চলমান পরীক্ষা শেষ করার দাবি জানান তারা।

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সরকারি সাত কলেজের চলমান ২০১৯ সালের স্নাতক চতুর্থ বর্ষ, ২০১৯ সালের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষা এবং ২০১৭ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপরই ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সড়কে নামনি শিক্ষার্থীরা। এদিকে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।  

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শুরুর পর ২০২০  সালের মার্চ থেকে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। পরে জুলাই থেকে অনলাইন, টেলিভিশন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিকল্প শিক্ষাদানের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা খুব একটা সাফল্য পায়নি। এর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসা ও ভ্যাকসিন দেওয়া শুরুর প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ মে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে এবং তার আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।  

এমএসি/এনএফ