পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই তীব্র যাত্রী সংকট চলছে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে। ভাড়া কমিয়েও কাঙ্ক্ষিত যাত্রীর দেখা মিলছে না। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিয়েছে।

লঞ্চমালিকরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব লঞ্চে ভাড়া কমিয়েও যাত্রীদের লঞ্চমুখী করা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার জ্বালানি তেলের দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজ সকালে ঘাট থেকে ঢাকা বরিশাল রুটে চলাচলকারী তিনটি লঞ্চ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে যদি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয় তাহলে অনেক লঞ্চই বন্ধ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন : গণপরিবহন ভাড়া বাড়ানোর তোড়জোড়, বৈঠক বিকেলে

তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে একাধিক লঞ্চমালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার কখনই আমাদের কথা চিন্তা করে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কারণে আমাদের লঞ্চের যাত্রী অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। ফলে আমাদের প্রতি ট্রিপে বিপুল পরিমাণ লোকসান দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার তেলের দাম দ্বিগুণ করেছে সরকার। এখন ভাড়া বৃদ্ধি করলেও তো আমাদের লোকসান গুনতে হবে, কারণ আমরা ভাড়া কমিয়েও যাত্রী পাচ্ছি না। তার ওপর যদি ভাড়া বাড়ানো হয় তাহলে তো যে যাত্রী পাচ্ছি তাও পাব না।

লঞ্চমালিক সমিতি বাংলাদেশের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের এ হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে লঞ্চমালিকরা নানা সময়ে লোকসানের মুখোমুখি হই। কতদিন আর লোকসান দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যায়! করোনার কারণে আমাদের লঞ্চ মালিকদের বিপুল পরিমাণ লোকসান দিতে হয়েছে। এরপর গত জুনে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমাদের লঞ্চের যাত্রী ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এতে প্রতি ট্রিপে প্রত্যেকটি লঞ্চকে গুনতে হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লোকসান। এখন আবার তেলের দাম ৪০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে আমাদের লোকসান আরও বাড়বে।

আরও পড়ুন : বাসভাড়া কত বাড়তে পারে, ধারণা দিল মন্ত্রণালয়

তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে আমরা তিনটি লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আবার তেলের দাম অতিমাত্রায় বৃদ্ধির ফলে লঞ্চ ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, আজ আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে পূর্বের নির্ধারিত ভাড়াই নেব। দুই একদিনের মধ্যে লঞ্চমালিকরা একসঙ্গে বসে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া আমাদের তো আর কোনো উপায় নেই।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার (যাত্রী পরিবহন) সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি হলেও লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা আগামীকাল লঞ্চ মালিকদের নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা পূর্বের নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার নির্দেশনা  দিয়েছি।

ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী ময়ূর-২ লঞ্চের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধি করা হলেও ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো নির্দেশনা আসেনি। তাই আমরা পূর্বের নির্ধারিত ভাড়া-ই নিচ্ছি।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, আমাদের আয়ের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এর মধ্যে সরকার তেলের দাম দ্বিগুণ করে আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত ভালো কিছু বয়ে আনে না। 

এসকেডি