চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে নির্মাণ হতে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের আদলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্ক। এর জায়গা চিহ্নিত করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের জায়গাও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। 

সীতাকুণ্ড সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্কের জন্য জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই এখানে সাফারি পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এরপর বাঘ, চিত্রা হরিণ, অজগর, কুমিরসহ নানা ধরনের প্রাণী অবমুক্ত করা হবে সাফারি পার্কে। 

শুক্রবার (১২ আগস্ট) জঙ্গল সলিমপুরে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্কের জন্য উদ্ধারকৃত ৫৭ দশমিক ৫০ একর জায়গার চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ দিন ২৫টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গল সলিমপুরের উদ্ধারকৃত খাস জায়গায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এক্সটেনশন হিসেবে সিঙ্গাপুরের জুরং ন্যাশনাল পার্কের আদলে নাইট সাফারি পার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ৫৭ একর সরকারি খাস জায়গা ঘিরে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে।

জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল এলাকা ও আলিনগর এলাকায় প্রশাসনের নিশ্ছিদ্র নজরদারি স্থাপনের জন্য প্রায় তিন শতাধিক সিসিটিভি স্থাপন করা হবে। এজন্য সিসিটিভি স্থাপনের জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল ও আলিনগরে প্রশাসনের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার কাজ করবে। এই বাহিনীগুলোর সিকিউরিটি চেকপোস্ট স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নির্দিষ্ট দূরত্বে নিরাপত্তা চৌকির জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, জঙ্গল সলিমপুর মৌজার প্রায় ৮৫০ একর সরকারি জায়গা দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সেখানকার ৫৭ দশমিক ৫০ একর জমিতে নাইট সাফারি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। অবৈধভাবে কথিত বিভিন্ন সমিতির থেকে জায়গা কেনাবেচা করছে তাদেরকে সতর্ক করে গণবিজ্ঞপ্তি সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

>> চট্টগ্রামে হবে মেট্রোরেল, কোইকার সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল ও আলিনগর এলাকার অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকার ১৫টি সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ফলে আলিনগর এলাকায় ইয়াসিন বাহিনীর কাছ থেকে যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে চলে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে আলিনগর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫টি পরিবার তাদের নির্মিত ঘরবাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, পাহাড় ও বন ধ্বংস করে অবৈধ আবাসন ও জবর দখলের কারণে জঙ্গল সলিমপুরের বনের অস্তিত্ব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ইকো ট্যুরিজমের উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নাইট সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই জায়গায় অবৈধভাবে বসবাসকারীদের মধ্যে যারা প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন তাদের পুনর্বাসন করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে যে সাফারি পার্ক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেখানে বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশে পুরোপুরি উন্মুক্ত অবস্থায় থাকবে। দর্শনার্থীরা গাড়ি দিয়ে ভেতর প্রবেশ করে ঘুরে ঘুরে বন্য প্রাণী দেখবেন। এ সাফারি পার্কে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে আলাদা শোয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ভেতরে এমনভাবে আলো-আধারী পরিবেশ তৈরি করা হবে যাতে দর্শকরা বন্যপ্রাণী রাতের বেলা কীভাবে চলাচল করে বা খাবার খায় তা সরাসরি দেখতে পাবেন।

সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, জঙ্গল সলিমপুর ও আলিনগরে অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে  জেলা প্রশাসন অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। সরকার কর্তৃক গৃহীত মহাপরিকল্পনা খুব দ্রুতই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর টানা অষ্টম দিনের মতো অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় শতাধিক একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে।

কেএম/ওএফ