ক্ষমতার অপব্যবহার করে দি ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. আতহার উদ্দিন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোস্তাক আহম্মদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।

সোমবার (২৯ আগস্ট) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক।

ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত। তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, পারস্পরিক যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ গ্রহীতার বন্ধকী সম্পত্তির ফোর্সড সেল ভেল্যু কম জানা সত্ত্বেও আগে দেওয়া ১৪ কোটি টাকা ঋণের অতিরিক্ত আরো ১০ কোটি টাকা ৩ মাস মেয়াদি টাইম ঋণ দিয়েছেন। যা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ছগীর চৌধুরী ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালক আবু আলম ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তারের সহায়তায় তাদের হিসাবে স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে ও নগদে উত্তোলন করে প্রতারণামূলকভাবে পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মসাৎ করে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ক্লিনিক থেকে নবজাতক চুরি, ১৯ ঘণ্টা পরও সন্ধান মেলেনি

মামলার বাকি আসামিরা হলেন— ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এসভিপি শওকত ওসমান চৌধুরী, খাতুনগঞ্জ শাখার সাবেক এসইও অ্যান্ড ম্যানেজার অপারেশন মো. আনোয়ার হোসেন, এস বি অটো ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটিডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ছগীর চৌধুরী, ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক মো. আবু আলম ও তার স্ত্রী পারভীন আজাদ।

এছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে ন্যাশনাল সার্ভে বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মাজেদুল ইসলাম, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ফয়সাল আহসান চৌধুরী ও সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমকে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের স্পেশাল মামলা নং ১০/২০১৯ এর অনুসন্ধানকালে জানা যায়, এস বি অটো ব্রিকসের এমডি মো. ছগীর চৌধুরীর দুটি ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের পটিয়া খাশিয়াইস মৌজায় অবস্থিত ১৯৯.৪০ শতক জমি রেজিস্টার্ড মর্টগেজা দলিল নং- ৪০৫৬ মূলে বন্ধকীকরণ করা হয়। ব্যাংকের শাখা কর্তৃক নিযুক্ত তৃতীয় পক্ষ ন্যাশনাল সার্ভে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত মূল্যায়ন প্রতিবেদন মোতাবেক মর্টগেজকৃত সম্পত্তির ফোর্সড সেল ভেল্যু ২৩.৫৩ কোটি টাকা হলেও ঋণ গ্রহীতাকে সর্বমোট ২৪ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করা হয়।

২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই ১৯৯.৪ শতাংশ জমির মার্কেট ভ্যালু নির্ধারিত করে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ফোর্সড সেল ভেল্যু নির্ধারিত হয় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণ গ্রহীতার বন্ধকীকৃত সম্পত্তির ফোর্সড সেল ভেল্যু কম জানা সত্ত্বেও তাকে আগে দেওয়া ১৪ কোটি টাকা ঋণের অতিরিক্ত ১০ কোটি টাকা টাইম ঋণ দিয়েছেন।

ওই টাইম ঋণের ঋণের ১০ কোটি টাকা এস বি অটো ব্রিকসের টাইম ঋণ হিসাবে ৫ কোটি টাকা করে দুই বারে ১০ কোটি টাকা বিতরণ করেছেন। এই টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা হিসেবে ২০১৫ সালের ২২ ও ২৩ জুন এস বি অটো ব্রিকসের টাইম ঋণ হিসাব নং ০১৭৩৫০০০৬০৯০৭ থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক আবু আলমের স্ত্রী পারভীন আক্তারের এসএনডি হিসাবে জমা করা হয়। পরে ওই সমপরিমাণ টাকা পুনরায় এস বি অটো ব্রিকসের হিসাবে ফেরত আনা হয়। ওই লেনদেনের কোনো ভাউচার পাওয়া যায়নি।

পরে ২০১৫ সালের ২২ জুন এস বি অটো ব্রিকসের টাইম ঋণ হিসাব নং ৭৩৫০০০৬০৯০৭ থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে এস বি অটো ব্রিকসেরই চলতি হিসাব ০১১১১০০০৪৩৩০১ তে ৫ কোটি টাকা জমা করা হয়। ওই হিসাব থেকে এস বি অটো ব্রিকসের মালিক মো. ছগীর চৌধুরী কর্তৃক ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক আবু আলমের স্বত্বাধিকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের নামে দেওয়া ক্যাশ চেক মূলে মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা মো. জাফর ২২ জুন ২০১৫ সালে ১ কোটি টাকা করে পাঁচটি চেক মূলে মোট পাঁচ কোটি উত্তোলন করে। ওই দিনই প্রতিটি এক কোটি টাকা করে পাঁচটি পৃথক জমা ভাউচারের মাধ্যমে মোট পাঁচ কোটি টাকা ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক আবু আলমের স্ত্রী পারভীন আক্তারের হিসাব নং ০১১৩০০০০০৭৩০ তে জমা করা হয়। এর পর দিন এস বি অটো ব্রিকসের টাইম ঋণ হিসাব নং ০১৭৩৫০০০৬০৯০৭ থেকে পাঁচ কোটি টাকা এস বি অটো ব্রিকসের চলতি হিসাব নং ০১১১১০০০৪৩৩০১ তে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে জমা করা হয়।

ওই হিসাব থেকে এস বি অটো ব্রিকসের মালিক মো. ছগীর চৌধুরী কর্তৃক ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক আলমের স্বত্বাধিকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের নামে প্রদত্ত ক্যাশ চেক মূলে মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা মো. জাফর প্রতিটি এক কোটি টাকা করে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকা উত্তোলন করে তিনটি জমা ভাউচারের মাধ্যমে ৫৩.৫০ লাখ টাকা ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক আবু আলমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের হিসাব নং ১১১১০০৩৯৭৩৫ এ জমা করে এবং আবু আলমের স্ত্রী পারভীন আকারের এস.ও.ডি হিসাব ০১৬২৩০০০ ৫৪৯৯০তে ১১টি জমা ভাউচারের মাধ্যমে মোট ৪৪৩.৯৫ লাখ টাকা জমা করে হস্তান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এভাবে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এস বি অটো ব্রিকসের এমডি ছগীর চৌধুরীর ১০ কোটি টাকা টাইম ঋণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড, খাতুনগঞ্জ শাখার ম্যানেজার অপারেশন মো. আনোয়ার হোসেন ও শাখা ব্যবস্থাপক শওকত ওসমান চৌধুরী, ব্যাংক শাখা কর্তৃক নিযুক্ত তৃতীয় পক্ষ ন্যাশনাল সার্চে বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি মো. মাজেদুল ইসলাম, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল আহসান চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও চৌধুরী মোস্তাক আহমেদ, পরিচালনা পর্ষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. আতাহার উদ্দিন এবং সাবেক চেয়ারম্যান এক্সিকিউটিভ কমিটি মাহবুবুল হক চিশতীরা (বাবুল চিশতী) ঋণ গ্রহীতার বন্ধকীকৃত সম্পত্তির ফোর্সড সেল ভেল্যু কম জানা সত্ত্বেও তাকে আগে দেওয়া ১৪ কোটি টাকা ঋণের অতিরিক্ত ১০ কোটি টাকা ৩ মাস মেয়াদি টাইম ঋণ প্রদান করেছেন। যা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ছগীর চৌধুরী ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক আবু আলম ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তারের সহায়তায় তাদের হিসাবে স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে ও নগদে উত্তোলন করে প্রতারণামূলকভাবে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মসাৎ করেছেন।

কেএম/এসএসএইচ