ফজলে রাব্বি পার্ক দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি
২০২০ সালের জুলাই মাসে সংস্কার, উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছিল গুলশানের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের। দুই বছর সময় পেরিয়ে গেলেও সংস্কার কাজ শেষ হয়নি পার্কটির।
এ পার্কে একসময় প্রতিদিন প্রাতভ্রমণ করতেন আশেপাশের এলাকার অনেক মানুষ। এ ছাড়া পথচারীসহ স্থানীয়রা বসে থাকার জন্য এটি ব্যবহার করতেন। কিন্তু বিগত দুই বছর ধরে তারা পার্কটি ব্যবহার করতে পারছেন না।
বিজ্ঞাপন
ক্ষোভ জানিয়ে তারা বলছেন, রাজধানীতে এমনিতেই পার্কের সংখ্যা অনেক কম। এর মধ্যে যদি একটি পার্ক সংস্কার করতে দুই বছরের বেশি সময় লেগে যায়, তাহলে তা দুর্ভাগ্যের বিষয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দ্রুত পার্কটি খুলে দেওয়া হোক।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আধুনিকায়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন রূপে ২২টি পার্ক ও চারটি খেলার মাঠের মধ্যে কিছু পার্কের সংস্কারের কাজ চলছে। এর মধ্যে গুলশানের এই ফজলে রাব্বি পার্কটিও রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে রঙিন টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে পার্কটি। ভেতরে চলছে সংস্থার ও উন্নয়নের কাজ।
এসব পার্ক ও মাঠের সংস্কার কাজ শেষ হলে সেখানে থাকবে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে, সাইকেল ট্র্যাক, ফোয়ারা, শিশুদের খেলনা, শরীরচর্চার যন্ত্রপাতি, বসার স্থান। থাকবে আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম। প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য পার্ক ও খেলার মাঠে থাকবে আলাদা ব্যবস্থা।
বিজ্ঞাপন
বয়স্কদের পাশাপাশি সব বয়সী মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে। পার্কগুলোতে বেশি গাছ রোপণ করার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন, উন্নত টয়লেট স্থাপন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে। সন্ধ্যার পর নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য পার্কের ভেতর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
গুলশানের শুটিং ক্লাবের পাশের স্থায়ী বাসিন্দা সাজেদুর রহমান নামের একজন বলেন, আশপাশের অনেক মানুষ প্রতিদিন সকালে এখানে আসতেন। এলাকাবাসীসহ পথচারীরা এখানে বসে থাকতেন। ছোট ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করত। কিন্তু উন্নয়ন কাজের নামে পার্কটি দুই বছর ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে করে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। কাজে এত সময় লাগলে কীভাবে হবে?
তিনি বলেন, এলাকাবাসী হিসেবে আমরা পার্ক ব্যবহারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বারবার আমরা দাবি জানিয়েছি, আজও দাবি জানাচ্ছি যেন দ্রুত এ ফজলে রাব্বি পার্কের কাজ শেষ করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
তোফাজ্জল হোসেন নামের আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমাদের এ শহরে এমনিতেই পার্ক, উন্মুক্ত স্থানের সংখ্যা অনেক কম। আমাদের আশেপাশের মধ্যে এই ফজলে রাব্বি পার্কটিই ছিল। কিন্তু সংস্কার ও আধুনিকায়নের কথা বলে সিটি করপোরেশন পার্কটি বন্ধ করে রেখেছে। প্রতিদিন মানুষ পার্কে এসে দেখতে পান পার্কটি বন্ধ।
তিনি বলেন, আমার সন্তানসহ এ এলাকার সন্তানরা পার্কটিতে খেলতে পারছে না। বয়স্ক মানুষ যারা নিয়মিত পার্কটিতে আসতেন, তারাও ঢুকতে পারছেন না। যেকোনো পার্কের উন্নয়ন কাজ চলতেই পারে, তাই বলে দুই বছর ধরে একটি পার্কের উন্নয়ন কাজ চলতেই থাকবে? এতদিন ধরে উন্নয়ন কাজ তাদের শেষ হচ্ছে না? আমাদের দাবি যেন দ্রুত পার্কটি খুলে দেওয়া হয়।
পার্কটির সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করছে মেসার্স এম আর কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সিরাজুল ইসলাম নামের এক কর্মকর্তা বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল পার্কটির। এ ছাড়া কয়েকবার নকশায় বিভিন্ন পরিবর্তন হয়েছে। সব মিলিয়ে কাজে একটু বিলম্ব হয়েছে। তবে বর্তমানে সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
পার্কটির সংস্কার প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিবেশ জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহম্মাদ আবুল কাশেমের ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১১ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে গুলশান ১ নম্বরের ডা. ফজলে রাব্বি পার্কটির প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজগুলো শেষ করতে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এএসএস/আরএইচ