দুর্নীতিবাজদের ৬৮২ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত (ক্রোক) ও আটক (ফ্রিজ) করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) আদালতের নির্দেশনায় ওই সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর মধ্যে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোট স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫৩৫ কোটি ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকার। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে রয়েছে ৯৬.৩৬৪৪ একর জমি, ১২টি বাড়ি ও ১১টি ফ্ল্যাট।

আরও পড়ুন >> যোগ-বিয়োগের কারসাজিতে কোটি কোটি টাকা লোপাট!

অন্যদিকে, আটক (ফ্রিজ) হওয়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১১৬০টি ব্যাংক হিসাবের ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬০ টাকা, ২৭ হাজার ৯৫৪ মার্কিন ডলার এবং ৭৯ কোটি ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬০ টাকার শেয়ার। মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১৪৬ কোটি সাত লাখ ৮৪ হাজার ১৫০ টাকার। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে বাজেয়াপ্ত ও আটক হওয়া মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৮২ কোটি সাত লাখ ৩৮ হাজার ৪৭৬ টাকার।

স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে বাজেয়াপ্ত ও আটক হওয়া মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৮২ কোটি সাত লাখ ৩৮ হাজার ৪৭৬ টাকার। এর মধ্যে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) জমি ও ভবন, রাজউকের সম্পত্তি ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের সম্পত্তি রয়েছে 

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, বাজেয়াপ্ত ও আটক হওয়া সম্পদের মধ্যে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) জমি ও ভবন, রাজউকের সম্পত্তি ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের সম্পত্তি রয়েছে। আদালতের ১৯টি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও আটক করা হয়।

অন্যদিকে, জুন পর্যন্ত দুই কোটি ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৭ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মামলায় বিচারিক আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার ৪৫৫ কেটি ৯৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৭ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ সময়ে দাখিল হওয়া ১২ হাজার ১০৮টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৫০০টি অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

আরও পড়ুন >> বিমানের বকেয়া ৩০৯২ কোটি, আদায়ে দুদকের তোড়জোড়

এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুই হাজার ১৮৩টি চিঠি দেওয়া হয়েছে দুদকের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যায়কারীদের জেল দিলে ভালো মানুষের ট্যাক্সের টাকায় তাদের খাওয়াতে হয়। আমরা চাই অন্যায় করলে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক। আমরা যথাযথভাবে আদালতকে জানাচ্ছি, ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালতও আমাদের সাহায্য করছে। আদালত ও আমাদের কর্মকর্তাদের সাহায্যে কাজগুলো এগিয়ে নিতে আমরা সক্ষম হচ্ছি।

বাজেয়াপ্ত ও আটক হওয়া সম্পদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্পদের দেখভালের ক্ষেত্রে একটি ঝামেলা আছে। কয়েক দিন আগেই হাইকোর্ট থেকেও রুলও ইস্যু হয়েছে। বাজেয়াপ্ত ও আটক সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব সাধারণত পুলিশকে দেওয়া হয়। তবে, ওই সম্পদ দেখভালের পর্যাপ্ত বাজেট থাকে না। এটা আদালত ঠিক করে দেয়। কার দায়িত্বে থাকবে, এটা আদালত বুঝিয়ে দেন।

আরও পড়ুন >> মিলেমিশে ইউসিবিএলের ৪০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি!

তবে, আদালতের ভিন্ন কোনো নির্দেশনা না থাকলে সংশ্লিষ্ট ওই সব সম্পদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করে দুদকের ব্যবস্থাপনা ইউনিট। ২০১৯ সাল থেকে কমিশনের স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়।

ওই ইউনিটের অধীনে ২০২০ সালে আদালতের আদেশে ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং ১৫২ কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ টাকা আটক বা অবরুদ্ধ করা হয়— বলেন দুদক কমিশনার।

২০২১ সালে ৩২৬ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং এক হাজার ১৬১ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৪৮০ টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (পাউন্ড, কানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার) আটক করা হয়। সবমিলিয়ে ওই দুই বছরে ৫০৬ কোটি ৮৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৪ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং এক হাজার ৩১৪ কোটি ৫১ লাখ ৯৭৬ টাকার সম্পদ আটক করা হয়।

আরএম/এমএআর/