যে আমার বুকের ধন কেড়ে নিয়েছে আমি তার ফাঁসি চাই। ভাবছিলাম একটু সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করব। কিন্তু তা আর হলো না। সে যে আমার ক্ষতি করবে, আমার বুকের ধন কেড়ে নিবে, এটা আমি জানতাম না। অশান্তিতে ছিলাম বলেই একটু শান্তির জন্য তাকে বিয়ে করি। কিন্তু তার বিনিময়ে শান্তি তো পেলাম না, বরং আমি আমার বুকের ধনকে হারালাম। 

তিন বছরের কন্যা সন্তানকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বামীর ফাঁসি দাবি জানান জরিনা বেগম।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাজধানীর বনানী কড়াইল বেলতলা এলাকায় তিন বছরের কন্যা সন্তানকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন বাবা। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা জরিনা বেগম বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর আসামি মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন। একইসঙ্গে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ উর রহমান তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জরিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘১৩/১৪ বছর আগে আমি বিয়ে করি। কিন্তু স্বামী গত কয়েক বছর ধরে আমার খোঁজ খবর নেয় না। সে নেশা করে বাসায় আসত। তাই আমি তাকে ডিভোর্স দেই। ৭ মাস আগে মহিউদ্দিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর আমি তাকে বিয়ে করি। ভাবছিলাম একটু সুখে-শান্তিতে ঘর সংসার করব। কিন্তু সে যে আমার ক্ষতি করব, আমার বুকের ধন কেড়ে নিব, এটা আমি জানতাম না। আমার সন্তানকে সে মেরে ফেলছে। এখন আমি তার ফাঁসি চাই। আমি আর কোনো কিছু চাই না। শুধু তার ফাঁসি চাই।'

তিনি বলেন, 'যেদিন সে আমার সন্তানকে মারে তার আগের রাতে আমার সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হয়। ভাবছিলাম আমি বাসা থেকে অন্য কোথাও গেলে তার রাগ কিছু কমবে। পরে আমি আবার আসব। কিন্তু আমি বাসা থেকে যাওয়ার পর সে যে এরকম ঘটনা ঘটাবে, আমি আমার মেয়েকে যে আর দেখব না, তা যদি জানতাম তাহলে যেতাম না।'

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বাদী ১৩/১৪ বছর আগে তিতু মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে তার দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে তিতু মিয়া তার স্ত্রীর খোঁজ খবর নেয় না। যে কারণে ৭ মাস আগে তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর বাদী হবিগঞ্জ জেলার এখতিয়ারপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকতেন। এরপরই আসামি মহিউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এর কিছুদিন পর মহিউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় বাদী জরিনার। ৭ দিন আগে মহিউদ্দিন তার স্ত্রী জরিনাকে ঢাকায় আসতে বলেন। এরপর তার কথা অনুযায়ী ঢাকায় এসে বর্তমান বাসায় থাকেন। বাসায় আসার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হতো। যে কারণে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটা থেকে আটটার দিকে আসামি মহিউদ্দিনের কাছে ভিকটিম তিন বছরের কন্যা সন্তানকে রেখে গ্রামের পরিচিত এক বোনের বাসা মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। 

রাত ১১টায় বাদী মেয়ের খোঁজখবর নিতে ফোন দেন মহিউদ্দিনের কাছে। এ সময় মহিউদ্দিন বলেন মেয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে আঘাত পেয়েছে, সেজন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাদী তাৎক্ষণিক বাসায় এসে দেখেন বনানী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে এবং রক্তমাখা লেপ উদ্ধার করেছে। বিষয়টি বাদীর সন্দেহ হলে এক প্রতিবেশীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, তার সন্তানের সঙ্গে মহিউদ্দিন বিকৃত যৌনাচারণ করেছে। এতে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তক্ষরণে মেয়েটি মারা যায়। 

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আসামি মহিউদ্দিন তিন বছরের শিশুটির সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারণ করেছে। যে কারণে শিশুটির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে মারা গেছে। আসামি মহিউদ্দিন ঘটনার বিষয়টির স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে সে বিষয়টি  উল্লেখ করেছে।’

ঘটনা প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে আমি খুবই মর্মাহত। কারণ ছোট একটি শিশু তার বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিকৃত যৌনাচারণের মধ্য দিয়ে একটি শিশুর মৃত্যু ঘটবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই বিকারগ্রস্ত। ’


টিএইচ/জেডএস