বিতর্কিত ধারায় অপসারিত দুদকের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ উদ্দিনকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন তার স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকরা।

বুধবার (১৩ অক্টোবর) চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 

এতে রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০০২ ব্যাচের বন্ধুমহলসহ স্কুলের সব শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সচেতন জনগণ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, দুদকের সাবেক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন একসময়ে আলোচিত হয়েছেন প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে, এখন আলোচিত চাকরিচ্যুত হয়ে। চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ দল-মত নির্বিশেষে তার অপসারণের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকেও তার প্রতি এই জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। 

বিবেকের তাড়নায় দেশপ্রেমের মহান আদর্শ নিয়ে আমরাও তার পক্ষে আজ একত্রিত হয়েছি। সে আমাদের স্কুলের ২০০২ ব্যাচের ফার্স্ট বয় এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন ছিলো। ছাত্র জীবন থেকেই সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলো। সে কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতো না। অর্থের প্রতি কখনো লোভ ছিল না। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সব ধরনের লোভ-লালসা ও হুমকিকে পেছনে ফেলে দুদকের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। 

মানববন্ধনের তার সহকর্মী ও শিক্ষকরা বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮৬৩ খালাসী নিয়োগের সবচেয়ে বড় ও গ্রহণযোগ্য মামলা করেছে সে। কর্ণফুলী গ্যাসের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারা করেছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের এল এ শাখা, গৃহায়ন, সিডিএ, গণপূর্ত, মাদক, ভূমি অফিসসহ স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর অনেক অনুসন্ধান ও তদন্ত করেছিল। ফলে রাঘববোয়ালদের চক্ষুশূল হয়েছিল। তাকে ম্যানেজ করতে না পেরে তার ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সখ্য থাকায় প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজরা তার বাসায় এসে হুমকিও দিয়েছে। এমনকি একের পর এক বেনামি অভিযোগও দাখিল করেছে। দুদক সেগুলো আমলেও নিয়েছে। কিন্তু তাকে যে বিধিতে অপসারণ করা হয়েছে, সেটা তো বিচারাধীন বিধি, যা এর আগে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ দুদক বিধি-২ ধ-২০০৮ এর ৫৪ (২) কে অসাংবিধানিক ও অবৈধ মর্মে রায় দেন, যা এখন রিভিউ অবস্থায় রয়েছে। নৈতিকভাবে ঐ বিধিটিকে ব্যবহার করা দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের সমীচীন হয়নি। 

তারা বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ আমলে নিয়ে যদি দুদকের মতো প্রতিষ্ঠান একজনের চাকরিই খেয়ে দেয়, তাহলে তো বলাই যায় শর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে? এই অবস্থায় বর্তমান সময়ে যেখানে দেশের টাকা পাচার হচ্ছে, দুর্নীতির হার জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সেখানে শরীফের মতো সৎ, সাহসী ও দক্ষ কর্মকর্তা আবশ্যক। 

যে কারণে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শরীফকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়। 

চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সই করা এক প্রজ্ঞাপনে অপসারণ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি অনুযায়ী ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। 

চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে বেশকিছু বড় দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মো. শরীফ উদ্দিন। একাধিক মহলের রোষানলে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে।

গত ১৩ মার্চ চাকরি ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আলোচিত উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। এর পাশাপাশি দুদকেও চাকরি ফেরতে আবেদন করেন শরীফ। যদিও ওই আবেদন বাতিল করে দুদক।

আরএম/জেডএস