স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে মাতৃসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো আট ঘণ্টা কাজ করে। কিন্তু এভাবে সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তাই আমরা সপ্তাহে সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ লক্ষ্যে আমরা মোট ৫০০টি সেবা কেন্দ্রে এ সেবা চালু করেছি। সেখানে পর্যাপ্ত জনবল, যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৫০০টি মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, জন্মের সময় অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করে। অনেকে অসুস্থ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। এটি যেনো না হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব এখনও অনেক কম। এটি বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিবছর এক লাখ শিশুর মৃত্যু হয়। মোট ডেলিভারির ৬০ শতাংশ সিজারিয়ান হয়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১৫ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা না। আমরা সিজারিয়ান কমিয়ে আনতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। এখন ৫০০ করেছি, সামনে আরও ৫০০ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কেন্দ্রে বছরে ১২ লাখ সাধারণ ডেলিভারি করা সম্ভব।

জাহিদ মালেক বলেন, দেশে মোট ডেলিভারির ৫০ শতাংশ হাসপাতালে হয়, বাকিটা বাড়িতে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক করতে হবে। এতে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমবে। আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে ৯০ থেকে শতভাগ ডেলিভারি প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যাবে।

বর্তমান সরকার শিশুদের স্বাস্থ্য ও অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মায়ের স্বাস্থ্যে নজর দিতে হবে। মা সুস্থ না থাকলে শিশু সুস্থ থাকবে না। আমাদের ব্রেস্ট ফিডিংয়ের হার বেড়েছে। এতে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। তাই এটি বৃদ্ধিতে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, নিরাপদ মাতৃত্ব আমাদের লক্ষ্য। শুধুমাত্র এসডিজি বাস্তবায়ন নয়, শিশু জন্ম দিতে গিয়ে একজন মা কেন মারা যাবে? মানবিক দিক থেকেই আমরা এটি বন্ধ করতে চাই। আমাদের অবকাঠামো আছে। এখন তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

প্রসঙ্গত, দেশে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই এখানে বাস করে। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে মা ও নবজাতকের মৃত্যু হার তুলনামূলক বেশি। এ পরিপ্রেক্ষিতে, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে এবং সেবা কেন্দ্র থেকে ২৪/৭ স্বাভাবিক প্রসবসেবা প্রদানের জন্য মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন ৩৩৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে ৫০০টি কেন্দ্রকে প্রাথমিক পর্যায়ে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব কেন্দ্রকে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হবে।

টিআই/এমএইচএস