হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের চিনির বাজার। সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, আবার অনেক এলাকায় চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চিনি নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের ধরতে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে বেশি দামে চিনি বিক্রি ও কারসাজির অপরাধে ১৪৮ প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

শনিবার (২২ অক্টোবর)  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারা দেশে চিনির বাজারে বিশেষ অভিযান করে এ জরিমানা করে। অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান, হট লাইনসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ এসেছে যে, বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না এবং বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এদিন সারা দেশে অধিদপ্তরের ৫০টি টিম ৫০টি বাজার অভিযান করে। এ সময় বেশি দামে চিনি বিক্রি, চিনি ক্রয়ের রশিদ দেখাতে না পারা, মজুদ করে বিক্রি করাসহ বিভিন্ন অপরাধে সারা দেশে ১৪৮ প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

>>চিনির বাজার হঠাৎ টালমাটাল 

রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট, শাহ স্মৃতি মার্কেট এবং সিটি করপোরেশন মার্কেটে চিনি নিয়ে বিশেষ অভিযান করা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস ঢাকা পোস্টকে জানান, সংকট বলে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে দেখা যায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করছে। কিছু দোকানে চিনি পেয়েছি আবার কিছু দোকানে চিনি পাইনি। তবে তারা অনেক সময় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে চিনি কেনার রশিদও দেখাতে পারেনি। এমন সব অপরাধে আজকে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংকটের কথা বলে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে খোলা চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি অনেক এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। 

ক্রেতারা বলছেন, জনগণকে জিম্মি করে ব্যবসায়ীরা খেলায় মেতেছেন। তারা সরকারের কোনো নিয়ম-নীতি মানছে না। নিজেদের ইচ্ছা মতো দাম বাড়াচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন কমেছে। যার জন্য বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

>>দ্রব্যমূল্য : সবই বাড়ছে, কমছে কী?

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বেশির ভাগ দোকানে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ কিংবা তিনদিন আগের কেনা চিনি কিছু কিছু দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে। তবে এ সময় বাজার ও দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত চিনির দেখাই মেলেনি। এই দোকানগুলোতে এক সপ্তাহ আগেও চিনি বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা কেজিতে। আর প্যাকেটজাত চিনি ছিল ৯৫ টাকা কেজি।

গত ৬ অক্টোবর সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাতের দাম ৯৫ টাকায় বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি। বরং এখন উল্টো দাম বাড়ছে।

সরকারি তথ্য মতে, দেশে চিনির মোট চাহিদার বড় একটি অংশ মেটানো হয় আমদানি করা চিনির মাধ্যমে। এই চিনি আমদানি হয় মূলত সিটি, মেঘনা, এস আলম, ইগলু ও দেশবন্ধু গ্রুপের হাত ধরে।

এসআই/এমএ