চিত্রনায়ক শাকিব খানের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান থানায় করা সাধারণ ডায়েরিটি (জিডি) গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, ভিউ বাড়াতে নাকি শাকিব খানের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য রটিয়ে তাকে অপদস্থ করতে ভিডিও বানানো হয়েছে সে বিষয়ে ধারণা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে ভিডিও লিংকগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।

শাকিব খানের জিডিটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাতে গুলশান থানায় শাকিব খানের ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান জনপ্রিয় এই নায়কের পক্ষ থেকে জিডি করেন। জিডিতে বিভিন্ন ফেসবুক ও ইউটিউবের ১৩টি লিংক যুক্ত করে দেওয়া হয়। জিডিতে বলা হয়, এই ১৩টি লিংক থেকে শাকিব খানের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

জিডির ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ১৩টি লিংকের ফরেনসিক পরীক্ষা করছে। পুলিশ আশা করছে, ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে এসব লিংক থেকে কি উদ্দেশে শাকিব খানকে নিয়ে নিয়ে ভিডিও ছড়ানো হয়েছে তা জানা যাবে। আর ফরেনসিক পরীক্ষায় যদি প্রমাণিত হয় যে শাকিব খানকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে লিংকগুলোর মাধ্যমে, তাহলে এ বিষয়ে অ্যাকশনে যাবে পুলিশ।

আরও পড়ুন : এবার আইনি ব্যবস্থা নিলেন শাকিব খান

এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক মো. বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাকিব খানের পক্ষ থেকে যে জিডিটি করা হয়েছে তার কপির সঙ্গে ১৩টি লিংক যুক্ত করা হয়। জিডিতে বলা হয়েছে, এসব লিংক থেকে শাকিব খানকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। তদন্তের শুরুতে ১৩টি লিংকের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফরেনসিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। 

ফরেনসিক পরীক্ষায় পুলিশ কি কি দেখবে— জানতে চাইলে গুলশান থানার এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা মূলত এই লিংকগুলোকে ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখছি এসব লিংক থেকে শাকিব খানকে নিয়ে ছড়ানো ভিডিওগুলোর পেছনের উদ্দেশ কি। ভিডিওগুলো কি মজা করার উদ্দেশে ছড়ানো হয়েছে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে শাকিব খানকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য বানানো হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় যদি আমরা দেখি, উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে শাকিব খানকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে গুজব ছড়ানো হয়েছে লিংকগুলোর মাধ্যমে, তাহলে আমরা অ্যাকশনে যাব। সেটা কি অ্যাকশন হবে তা আমরা পরে জানিয়ে দেব।

শাকিব খানের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৩টি লিংক বন্ধের বিষয়ে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না— জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম ফরমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জিডিটি শুক্রবার হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমরা তাই নেব।

যেহেতু শাকিব খানের অভিযোগটি সাইবার ক্রাইম সম্পর্কিত, জিডির তদন্তের বিষয়ে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে জানানো হবে কি না— জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি বলেন, প্রয়োজন হলে আমরা জিডিটি সাইবার ক্রাইমে পাঠাবো বা তাদের সহযোগিতা নেব। 

এদিকে জিডির বিষয়ে জানতে নায়ক শাকিব খানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

নায়িকা বুবলীর সঙ্গে শাকিব খানের ব্যক্তিগত জীবন ও সন্তানের খবর প্রকাশ্যে আসে গত ৩০ সেপ্টেম্বর। পরে একাধিক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শাকিবকে নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে প্রকাশ করে। এর ভিত্তিতে ১৩টি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের বিরুদ্ধে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) শাকিব খানের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন এসকে ফিল্মসের ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান।

এর আগে শাকিব খান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘ভিউ আর হিটের আশায় যারা অন্যের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে এত বাজে ও মিথ্যা তথ্য ছড়াতে পারে, তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য দেশের আইনই যথেষ্ট। কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজ ভিউয়ের আশায় মিথ্যা কনটেন্ট প্রচার করে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে যাচ্ছে। একটার পর একটা ইস্যু ক্রিয়েট করে যাচ্ছে। আর এসব ভুয়া বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কয়েক দিন ধরে বেশকিছু নিউজ পোর্টাল সত্যতা নিশ্চিত না করে কোনো ধরনের স্টেটমেন্ট ছাড়াই আমার নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এসব মিথ্যা নোংরামি ছড়াচ্ছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। কঠোরভাবে জানাচ্ছি, এ ব্যাপারে আমার আইনজীবী দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’ 

শাকিব খানের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণার সপ্তাহখানেক পরই আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটলেন তার প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মসের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান। ১৩টি ফেসবুক ও ইউটিউব আইডিকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি। সাধারণ ডায়েরিতে মনিরুজ্জামান উল্লেখ করেছেন, ‘শাকিব খান একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী এবং দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সহিত কাজ করছেন। কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বেশকিছু স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করে আসছে। তারা শাকিব খানের পেশাগত ও ব্যক্তিগত ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিজীবনের কিছু তথ্য, স্থিরচিত্র ও ভিডিও চিত্র বিকৃত করে মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য সংযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করছে।’

এ ব্যাপারে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ শাহনুর রহমান বলেন, বিভিন্ন ফেসবুক লিংক ও ইউটিউব প্লাটফর্ম ব্যবহার করে চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে একটা গ্রুপের অপপ্রচার ও মানহানিকর বক্তব্য প্রচারের বিরুদ্ধে তার ম্যানেজার মনিরুজ্জামান সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টা তো সাইবার অপরাধের আওতায় পড়ে। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। পুরো বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে।

এমএসি/এসএসএইচ