জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গণঅভিবাসন এবং বাস্তুচ্যুতি হ্রাসে সংঘবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছে বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)।

সোমবার (১৪ ন‌ভেম্বর) মিশরের শারম আল-শেখে কপ-২৭ উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সাইড-ইভেন্টে এ আহ্বান জানা‌নো হয়।

বক্তরা ব‌লেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিনিয়ত স্থানচ্যুতি এবং অভিবাসনের মূল চালক হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যুত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ভবিষ্যৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার জন্য প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য রয়েছে। এটি  পূরণের  জন্য শক্তিশালী বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং জাতীয় নীতিগুলোতে জলবায়ু অভিবাসন বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। 

বক্তরা উল্লেখ ক‌রেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশমন এবং অভিযোজন নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতি জলবায়ু অভিবাসনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে। মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আজকে নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের জীবন নির্ধারণ করবে। 

>>জলবায়ু পরিবর্তন : ঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা কি সক্ষম?

‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মানব গতিশীলতা- অভিবাসন এবং জলবায়ু পদক্ষেপে ইতিবাচক ন্যারেটিভ গঠন’ নামের অনুষ্ঠানটি যৌথভা‌বে আয়োজন করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইওএম এবং সিভিএফ। 

অনুষ্ঠা‌নে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০২১ অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে আনুমানিক ২১৬ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী হতে পারে। 

বন্যা, ঝড়-বৃষ্টি, নদী ভাঙন এবং লবণাক্ততার উচ্চ সংবেদনশীলতাসহ ১৬ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলতায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

অনুষ্ঠা‌নে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অভিবাসন এবং বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু-প্ররোচিত অভিবাসনসহ ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতাকে  স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া দরকার। 

তি‌নি ব‌লেন, বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই জলবায়ু বিষয়ক প্যারিস চুক্তি স্মরণ করে স্বীকার করতে হবে যে জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের জন্য একটি ভয়াবহ হুমকি। এই ভয়বহতা মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।

>>জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ৩০০ কোটি ডলারের কোম্পানি দান

আইওএমের উপ-মহাপরিচালক (অপারেশন) উগোচি ড্যানিয়েল বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসনের মধ্যে ক্রমবর্ধিত আন্তঃসম্পর্ক লক্ষ্য করছি। এই অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এটা মনে রাখতে হবে অভিবাসন একটি ঐচ্ছিক বিষয়, বাধ্য হয়ে প্রয়োজন নয়। 

অনুষ্ঠানে উগান্ডা সরকারের পানি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব আলফ্রেড ওকোত অকিদি ভার্চুয়ালি যোগদান করে বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত কাম্পালা ঘোষণার প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে সিভিএফের সিনিয়র উপদেষ্টা ম্যাথিউ ম্যাককিননের সঞ্চালনায় ঘানার বিশেষ দূত এবং সিভিএফের সভাপতি হেনরি কোয়াবেনা, আইওএমের অভিবাসন জলবায়ু পদক্ষেপের বিশেষ দূত এবং আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের সভাপতি ক্যারোলিন ডুমাস, কোস্টারিকা সরকারের পরিবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জলবায়ু পরিবর্তন অধিদপ্তরের অভিযোজন বিষয়ক সমন্বয়ক ইভান দেলগাদো অংশগ্রহণ করেন। 

এনআই/এমএ