ছাড় দেয়নি সরকারের কর্তাদেরও
কাউকেই ছাড় দেয়নি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। বাদ পড়েননি মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যসহ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও।
করোনার সংক্রমণ রোধে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এ সময়ে বন্ধ ছিল গণপরিবহন, অফিস-আদালত। এরপর ৩১ মে থেকে যথারীতি সব কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বেঁধে দেওয়া হয় নিয়মনীতি।
বিজ্ঞাপন
সাধারণ মানুষের মতোই কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদের ১৬ সদস্য। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম আক্রান্ত হন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মারা যান। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন।
মন্ত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিলেন যারা
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিলেন যারা
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল করোনায় আক্রান্ত হন।
এছাড়া উপমন্ত্রীদের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বীর বাহাদুর উশৈসিং
গত বছরের ৬ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। আক্রান্তের পরদিনই (৭ জুন) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বান্দরবান থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকার সিএমএইচে আনা হয়। ২৪ জুন করোনামুক্ত হন তিনি।
টিপু মুনশি
২০২০ সালের ১৭ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ভর্তি হন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শেষে ২৭ জুন দুপুরে তিনি করোনামুক্ত হন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের সর্দিজনিত উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ১২ জুন তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পরদিন তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। ২২ জুন করোনামুক্ত হয়ে বাসায় ফেরেন মন্ত্রী।
মো. শাহাব উদ্দিন
১২ আগস্ট দুপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে ভর্তি হন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। ২০ আগস্ট করোনামুক্ত হয়ে সিএমএইচ থেকে ঢাকার বেইলি রোডের সরকারি বাসায় ফেরেন তিনি।
এম এ মান্নান
শরীরে জ্বর অনুভব করায় করোনা পরীক্ষা করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গত ১৩ অক্টোবর করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। প্রায় ২০ দিন চিকিৎসার পর ২ নভেম্বর মন্ত্রী করোনামুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন।
ড. হাছান মাহমুদ
গত ১৬ অক্টোবর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ আসায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ২৫ অক্টোবর করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা নমুনা পরীক্ষায় তার নেগেটিভ ফল আসে।
ইমরান আহমদ
গত ৪ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের করোনা শনাক্ত হয়। এক মাসের বেশি সময় পর তিনি করোনামুক্ত হন।
ড. এ কে আবদুল মোমেন
কোনো লক্ষণ না থাকলেও পরীক্ষার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের করোনার পজিটিভ ফল আসে। ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৪৭তম সম্মেলনে যোগদানের জন্য নাইজার সফর উপলক্ষে নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে তার করোনা পরীক্ষা করা হয়। ২৫ নভেম্বর ফল জানা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাসায় আইসোলেশনে থেকে তিনি করোনামুক্ত হন।
ডা. দীপু মনি
গত ৬ ডিসেম্বর রাতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর সরকারি বাসভবনে আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। গত ২১ ডিসেম্বর করোনামুক্ত হন শিক্ষামন্ত্রী।
শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ
গত ১৩ জুন রাত পৌনে ১২টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে মৃত্যু হয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর। মারা যাওয়ার পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় ১৪ জুন সকালে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার কেকানিয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক
করোনা পজিটিভ হয়ে গত ১ জুলাই সিএমএইচে ভর্তি হন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। সেখানেই চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে ফলোআপ পরীক্ষায় প্রতিমন্ত্রীর করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
গত ১৪ সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি সরকারি বাসভবনে হোম আইসোলেশনে ছিলেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর করোনামুক্ত হন তিনি।
ফরহাদ হোসেন
গত ১০ অক্টোবর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এরপর হোম আইসোলেশনে চলে যান তিনি। ৩০ অক্টোবর পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
শাহরিয়ার আলম
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গত ১২ নভেম্বর তার করোনা শনাক্ত হয়। প্রতিমন্ত্রী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে করোনামুক্ত হন।
জাহিদ আহসান রাসেল
গত ১৫ নভেম্বর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের করোনা পরীক্ষার পর পজিটিভ ফল আসে। তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে করোনামুক্ত হন।
হাবিবুন নাহার
গত ৭ নভেম্বর করোনা পজিটিভ ফল আসে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের। জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে তার নমুনা পরীক্ষা করোনা হয়। পরে অবশ্য অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি করোনামুক্ত হন।
এসএইচআর/এমএইচএস/এমএআর/এমএমজে