পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেছেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে কর আদায়ে মন্দার কথা বলা হচ্ছে। যদি কর আদায় মন্দাই হয়, তাহলে এতো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কীভাবে? 

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ধরা হয়েছে ‘পোস্ট কোভিড ইন অ্যান ইউক্রেন অ্যান্ড ডিভিসিভ ওয়ার্ল্ড’। সম্মেলনের প্রথমদিন প্রায় নয়টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে চলতি ও আগামী বছরে সরকারের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা চিন্তা করলে হবে না। আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে প্রবৃদ্ধি উৎসর্গ করে হলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে গিয়ে ৬ শতাংশ হলেও খারাপ কিছু হবে না। 

এম. এ. মান্নান বলেন, অর্থনীতিতে ইতিবাচক মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। জিডিপির তুলনায় কর আদায়কে মন্দ বলা হয়েছে। কিন্তু এতো যদি ভয়ংকর অবস্থা হয়, তাহলে ৫-৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় কীভাবে? নিশ্চয়ই রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি কিছু একটা দিয়ে পুষিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রাজস্ব খাতে বড় উল্লম্ফন আশা করা যায় না। যদিও আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে কর আদায় বাড়ানো। 

তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপর ধরে রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে কমে এসেছে। এটা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য। আমরা বিবিএস এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ওপরে আস্থা রাখতে চাই।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সাদিক আহমেদ বলেন, করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো অব্যাহত রাখা ঠিক হবে না। কেননা এখন প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়ার সময় নয়। এখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। এজন্য সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া, আমদানি নিয়ন্ত্রণ না করা এবং এলসি খোলা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। চাহিদার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ কাঠামোগত সংস্কার দরকার। বিশেষ করে একটি কর কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কেননা বাংলাদেশের কর আদায় হার বিশ্বের প্রায় সব দেশের চেয়ে কম। এসব উদ্যোগ নিলে চলতি অর্থবছর হয়ত প্রবৃদ্ধি কমে ৬ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু সেটিও খারাপ হবে না।

উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড.বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। 

দ্বিতীয় অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এসময় সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান।

এসআর/কেএ