অনেক নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিএনপি গণসমাবেশের জল গড়িয়েছে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ওই সমাবেশ শুরু হয়। গণসমাবেশের কারণে গোলাপবাগসহ আশেপাশের এলাকায় সাময়িক অসুবিধা হলেও পুরো নগরবাসী ভুগছে গণপরিবহন সংকটে। চাপের মুখে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাস মালিক ও চালকরা।

এর আগে বিএনপির অনুষ্ঠিত ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশের মধ্যে ৭টি সমাবেশের সময় পরিবহন ধর্মঘটের ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে নগরবাসীও মনে মনে ধারণা করে নিয়েছিলেন, ঢাকার অবস্থা কী হবে। সেই আশঙ্কাই বাস্তবে পরিণত হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে রাজধানীতে যান চলাচল সীমিত থাকলেও শনিবার সকাল থেকে হাতেগোনা ২/১টি ছাড়া তেমন বাস চোখে পড়েনি রাজধানীতে। এছাড়া দূরপাল্লার তেমন কোনো বাসও ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর আসাদগেট, মোহাম্মদপুর, সংসদ মোড়, প্রগতি সরনি, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া এবং যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে কোথাও বাসের দেখা মেলেনি। বলা চলে, ঢাকার রাস্তা থেকে বাস উধাও হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চললেও অন্যান্য দিনের চেয়ে সেগুলোর সংখ্যাও কম। সকালে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যারা বাসা থেকে বের হয়েছেন তাদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে ভাগ্যের জোরে বাসের দেখা মিলছে। অবশ্য রাস্তায় মানুষের সংখ্যাও ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে কম।

গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাস কাউন্টার বন্ধ। কিছু কাউন্টার খোলা থাকলে তেমন টিকিট বিক্রি হয়নি। বাস ছাড়ার সময়সূচি ১০টায় হলে সেটা নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে না। সেখানে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার জুয়েল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ যাত্রী একেবারেই নেই। সকাল থেকে গাড়ি ছেড়েছে মাত্র ১টা। তাতেও আবার ৮-১০টা সিট ফাঁকা ছিল। যাত্রী স্বল্পতায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।

ঢাকা পোস্টের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে টাঙ্গাইল থেকে কোনো গণপরিবহন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসেনি। এমনকি বাস টা‌র্মিনা‌লে ঢাকাগামী প‌রিবহনের সাম‌নে যাত্রী‌দের তেমন চাপ দেখা নেই।

এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর বিকেলে এক জরুরি বৈঠক থেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ঘোষণা দিয়েছিল, লোকসান হলেও যেন বাস মালিকরা রাস্তায় বাস চালায়। সমিতির সিদ্ধান্ত, যেকোনো মূল্যে বাস অন রোড রাখতে হবে। কিন্তু সমিতির সে কথা মানেনি সমিতিতে থাকা মালিকরাই। তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে এমনটাই অভিযোগ যাত্রীদের।

তবে বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আতঙ্ক আর চাপের মুখে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে মালিক সমিতি বলছে, যাত্রী নেই বলে রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম।

ঢাকা-সাভার রুটে চলাচলকারী সাভার পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু গত ৭ তারিখে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, আমরা আতঙ্কের মধ্যেই আছি। সেই ঘটনা থেকে অন্যান্য মালিকরাও একটি ভয়-ভীতির মধ্যে রয়েছে। কখন কি ঘটে যায়, সেটা তো বলা যায় না। মালিকরাও সাহস করতে পারছে না, আর চালকরাও গাড়ি চালাচ্ছে না। সমাবেশ শেষ হলে পরিস্থিতি বুঝে বাস চালানো শুরু করা হবে।

ঢাকা-জামালপুর রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহনের চালক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আজ রাত থেকে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। সমাবেশের কারণে গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না। চন্দ্র যাওয়ার পরেই গাড়ি আটকে দিচ্ছে পুলিশ।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তায় যাত্রী নেই বলে গাড়ির সংখ্যা কম। যাত্রী বাড়লে আবার রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।

এমএইচএন/এসএম