ফাইল ছবি

করোনাকালে বিদেশফেরত অভিবাসীদের আর্থিক সংকট বেড়েছে। অভিবাসীদের ঋণের বোঝা বেড়েছে, ঋণ পরিশোধে তারা টাকা ধার করেছেন এবং স্বাস্থ্যখাতে তাদের ব্যয়ের পরিমাণ কমাতে হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ‘র‌্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট রাউন্ড-২: নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টারনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। দুই দফায় দেশের ১২টি উচ্চ অভিবাসনপ্রবণ জেলায় গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

গবেষণাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ‘রিজিওনাল এভিডেন্স ফর মাইগ্রেশন এনালাইসিস অ্যান্ড পলিসি (রিমেপ)’ প্রকল্পের আওতায় পরিচালনা করা হয়। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) আইওএম বাংলাদেশ শাখার ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের দেশব্যাপী লকডাউন প্রত্যাহারের পরের মাসগুলোতে ফিরে আসা অভিবাসীরা অনেকেই চাকরি খুঁজে পেয়েছেন। স্বাস্থ্য ও মনো-সামাজিক সমস্যা কমেছে। উন্নত হয়েছে পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্য সুরক্ষা। তবে অভিবাসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বেড়েছে।

গবেষণার জরিপে ২০২০ সালের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে এক হাজার ৫৮৪ জন অভিবাসী অংশ নেন, যার মধ্যে ৮৭৫ জন বিদেশফেরত ও ৭০৯ জন অভ্যন্তরীণ অভিবাসী। প্রথম দফায় ২০২০ সালের জুন মাসে দুই হাজার ৭৬৫ জনের ওপর গবেষণাটি করা হয়েছিল, যেখানে দ্বিতীয় ধাপের সবাই ছিলেন।

গবেষণার ফলাফল অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিবাসীদের ওপর করোনার প্রভাব, পুনরায় এক করতে গিয়ে সমস্যা এবং পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়গুলো বুঝতে সহযোগিতা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে বিদেশফেরত অভিবাসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ প্রথম ধাপের চেয়ে ২০ ভাগ বেড়েছে। প্রথম ধাপের গবেষণায় এ হার ছিল ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে যা দাঁড়ায় প্রায় ৭১ শতাংশে।

বিদেশফেরত অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাকরি খুঁজে পেতে সমস্যা (৪৭ শতাংশ), অর্থনৈতিক সমস্যা (২৯ শতাংশ) এবং লোন পরিশোধের বোঝা (২১ শতাংশ)। দ্বিতীয় ধাপের জরিপে দেখা যায়, উত্তরদাতাদের বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৪ শতাংশ, যা আগের ধাপে ছিল ৭৪ শতাংশ। মূলত লকডাউন তুলে দেওয়া, সাধারণ কর্মকান্ড উন্মুক্ত হওয়া এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় কিছুটা বেকারত্বের হার কমেছে। তারপরও গবেষণায় অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি ছিল।

প্রথম ধাপের প্রতিবেদনে যেখানে বিদেশফেরত অভিবাসীদের ৭০ শতাংশ তিন বেলা খেতে পারতেন, দ্বিতীয় ধাপে তা ১৮ শতাংশ বেড়ে ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের এই হার ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, করোনার কারণে তৈরি হওয়া সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন করতে চেয়েছেন ৬০ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসী। আর অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের এই হার ৩৯ শতাংশ।

অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় অভিবাসীরা বলেছেন, টাকা ধার করা, খরচ কমানো এবং অর্থ সহায়তার ওপর তারা নির্ভরশীল ছিলেন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান ও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় টাকা ধার করা বা অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন এমন অভিবাসী ৫০ শতাংশ (আন্তর্জাতিক অভিবাসী) এবং ৭১ শতাংশ (অভ্যন্তরীণ অভিবাসী)।

বিদেশফেরত অর্ধেকেরও বেশি অভিবাসী বলেছেন, তাদের প্রত্যেকের এক লাখ টাকার উপরে ঋণ আছে এবং ২৮ শতাংশ বলেছেন তাদের ঋণ আছে দুই লাখ টাকার উপরে। ৫৮ শতাংশ আন্তর্জাতিক ও ৫৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণ অভিবাসী বলেছেন, তাদের ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালের জুনের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বেড়েছে।

এ বিষয়ে আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, আমরা একটি অভূতপূর্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অভিবাসী ও তাদের পরিবার কীভাবে বেকারত্ব ও লকডাউন মোকাবিলা করেছে এবং তাদের অভিবাসন ইচ্ছা কী তা বুঝতে নিবিড় কার্যক্রম, গবেষণা, ও তথ্যসংগ্রহ করা দরকার, যা এ পরিস্থিতি থেকে উন্নত ও দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করবে।

তিনি বলেন, এ তথ্য অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ভবিষ্যতে আমাদের সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে। করোনাভাইরাসের মতো ভবিষ্যতে কোনো প্রাদুর্ভাব থেকে অভিাবসীদের সুরক্ষা দিতে সহযোগিতা করবে। আমাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী ইঙ্গিতগুলোকে সমর্থন করে যে, করোনা মহামারি বৈশ্বিক চলাচলের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। দেশে এবং দেশের বাইরের অভিবাসীদের চাহিদা মেটাতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৭ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসী আবার বিদেশে ফিরে যেতে চান। তাদের গন্তব্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ইতালি এবং মালয়েশিয়া।

অভিবাসীদের দাবি, পুনরায় অভিবাসনের সময়সীমা নিয়ে নিশ্চয়তা কমছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ভিসা নিয়ে অনিশ্চয়তা, ভ্যাকসিন প্রাপ্তি, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং ভ্রমণ খরচের কথা। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের ৭৫ শতাংশ অভিবাসন করতে চেয়েছেন, যা প্রথম ধাপের গবেষণায় ছিল ৮৫ শতাংশ। দেশের ভেতরে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ৪৭ শতাংশ বলেছেন তারা ঢাকায় যেতে চান। এ হার চট্টগ্রামের জন্য ১৫ শতাংশ এবং বরিশালে ১৩ শতাংশ।

একে/এসএসএইচ