মানুষ জন্ম নিলেই তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পরেই মানুষকে গোসল করিয়ে যার যার ধর্মের রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী আসেন। অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন, আবার অনেকে মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর পরে যার যার ধর্মের রীতি অনুযায়ী গোসল করানোর জন্য ঢামেক হাসপাতালে চালু হয়েছে অন্তিমযাত্রা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। এছাড়া থাকছে সব ধর্মের প্রার্থনার ব্যবস্থা।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর অন্তিমযাত্রা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

আরও পড়ুন>>ঢামেক হাসপাতালে কোটি টাকার ‘বিট বাণিজ্য’, নেপথ্যে পিসি আউয়াল!

সরজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের পাশে এই বিশেষ অন্তিমযাত্রা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দুটি কক্ষ আছে। একটি কক্ষ মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর জন্য এবং আরেকটিতে সব ধর্মের ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। সেখানে বসে যার যার ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারার জন্যই এ ব্যবস্থা। এখানে মরদেহ গোসল করানোর জন্য গরম পানির সুব্যবস্থা রয়েছে। বাইরে মৃতের আত্মীয়স্বজনদের বসার জন্য বেশ কয়েকটি আলাদা বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, মানুষ মারা যাওয়ার পরে যার যার ধর্মের রীতি অনুযায়ী তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এত সুন্দরভাবে মৃতদেহ গোসল করানোর ব্যবস্থা করা এবং সব ধর্মের ধর্মগ্রন্থ আলাদা বক্সে করে রাখা হয়েছে যাতে করে তারা তারা সেগুলো পড়তে পারেন। আমার জানা মতে এমন ধরনের ব্যবস্থা দেশের অন্য কোনো হাসপাতালে নেই। 

আরও পড়ুন>>বদলে যাচ্ছে ঢামেকের বহির্বিভাগ

তিনি বলেন, এই বিষয়টি সম্পর্কে এখনো সবাই জানতে পারেনি। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি সবাই জানতে পারবে বলে আশা করি। এখানে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। এখানে সম্পূর্ণ ফ্রিতে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>>ছদ্মবেশে ঢাকা মেডিকেলে দুদক, দুর্নীতির প্রমাণ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। সবাইকে তো আর সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো সম্ভব নয়। অনেকেই বার্ধক্যজনিত কারণ এবং বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মারা যান। বেশিরভাগেরই আত্মীয়-স্বজন ঢাকার বাইরে থেকে আসেন ও অনেক দূরে মরদেহ নিয়ে যেতে হয়। ঢামেকে অন্তিমযাত্রা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের দরকার ছিল। এ কথা চিন্তা করেই আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠাই। পরে মন্ত্রণালয় থেকে একটি ফান্ড দেওয়া হয়। সেটি দিয়েই এই ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়।

আরও পড়ুন>>ঢামেকের ওয়ার্ডে বসেই সরকারি কর্মচারীর ইয়াবা সেবন

তিনি বলেন, এখানে একটি শেড করা হয়েছে। এখানে রোদ-বৃষ্টি হলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। মোট কথা মৃত্যুর পরে একজন মানুষের যেসব ধর্মীয় রীতি মানা হয়, সেজন্য যা যা করা দরকার এখানে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব বেশিদিন যাবৎ এটি চালু হয়নি। মৃত্যুর পর এখানে সবাইকে যে গোসল করানো হয় বিষয়টি সেরকম নয়। অনেকেই এখনো এটি জানে না। এখানে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। এটি সবার জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি করা হয়েছে। 

এসএএ/কেএ