আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এখন আর আকাশ থেকে তাকালে কুঁড়ে ঘর দেখা যায় না। বাস্তবিক অর্থে কুঁড়ে ঘর হারিয়ে গেছে। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের এ বদলে যাওয়ার পেছনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবদান রয়েছে। 

তিনি বলেন, গত ১৪ বছর ধরে আমাদের সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। সেই গভীর সম্পর্ক আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের কলকাতা থেকে ২৫ জন এবং  আসাম ও গৌহাটি থেকে আসা ৯ সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা দুই দেশের নাগরিক। কিন্তু আমরা একই পাখির কলতান শুনি, একই নদীর অববাহিকায় আমরা বেড়ে উঠি। কাঁটাতারের বেড়া আমাদের এই বন্ধনকে বিভক্ত করতে পারেনি। এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আমাদের ভালোবাসাকে বিভক্ত করতে পারেনি। ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। মানুষে মানুষে আত্মিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের এই আত্মিক সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে একাত্ম হয়েছে একাত্তর সালে। যখন আমাদের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনী রক্ত ঝরিয়েছে। আমাদের কষ্টের সঙ্গে ভারতের মানুষও কষ্ট স্বীকার করেছে। এক কোটির বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। যতই কাঁটাতারের বেড়া দিক কিংবা অন্য কোনো আইন-কানুন হোক না কেন, রক্তের অক্ষরে লেখা হৃদয়ের এই বন্ধন কখনও বিভক্ত করা যাবে না।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, যে ছেলেটি ১৪ বছর আগে বিদেশ গেছে সে এসে নিজের শহর চিনতে পারে না। নিজের গ্রাম চিনতে পারে না। ‘পায়ে চলা মেঠো পথ গেছে বহুদূর, রাখালি বাঁশির সুর সরল মধুর’ সেটি শুধু কবিতায় আছে। এখন সহজে পায়ে চলা মেঠো পথ গ্রামেও খুঁজে পাওয়া যায় না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এভাবেই বদলে গেছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেন। সমাজ এবং রাষ্ট্রকে সঠিক পথে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। এখান থেকে গিয়ে যখন আপনারা কলম ধরবেন কিংবা টেলিভিশনে রিপোর্ট হবে তখন দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে। আমাদের দেশের বদলে যাওয়ার গল্প ভারতবাসী জানবে এবং বিশ্ববাসী জানবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোটো দেশ। আমরা মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম। কিন্তু আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীতে ৯২তম। ঝড় বন্যা জলোচ্ছ্বাসের দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত এখানে নিত্যসঙ্গী। কিন্তু সবকিছুকে পরাভূত করে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে উপড়ে ফেলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে উন্নয়নের সোপানে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ। 

তিনি বলেন, পুরো পৃথিবী আজ বাংলাদেশের প্রশংসা করে। কিন্তু আমাদের দেশের বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা দেখেও দেখেন না, শোনেও শোনেন না। তারা ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গিয়ে বলেন কোনো উন্নয়ন হয়নি। পদ্মা সেতু দিয়ে ওপাড়ে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বক্তৃতায় বলে কিছুই হয়নি। এটিই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। 

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মোহাম্মদ রেজার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বশর মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, সাধারণ সম্পাদক কিংসুক প্রামাণিক, আসামের সিনিয়র সাংবাদিক মনোজ কুমার গোস্বামী।

মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদুল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ প্রমুখ। 

এসকেডি